‘কষ্টের ফেরিওয়ালা’ মডরিচ

0
155
আরেকটি ফাইনাল হারের হতাশা লুকা মডরিচের চোখে-মুখে।

কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন– কবি হেলাল হাফিজ তাঁর ‘ফেরীঅলা’ কবিতায় কষ্টের কথা বলতে গিয়ে এমন একটা লাইন লিখেছেন শেষ পঙ্‌ক্তিতে। তাঁর সেই কবিতার পরতে পরতে হরেক রকম কষ্টের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। এ সময়ে এসে মনে হবে, ফুটবলে সেই কষ্টের ফেরিওয়ালা লুকা মডরিচ।

সেই জন্ম থেকে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাঁর জীবন। শৈশবের কষ্ট শেষ করে যখন ক্লাবে আলোর মুখ দেখছেন, তখন অন্য পাশ পুরোপুরি আঁধারে ঢাকা। সেই আঁধার পেরিয়ে যাওয়ার কত স্বপ্ন, কত ছবিই না মনের ক্যানভাসে এঁকেছিলেন মডরিচ। কিন্তু বারবার প্রতিপক্ষ ভেঙে চুরমান করে গেছে তাঁর সেই ছবির ফ্রেম।

সর্বশেষ রোববার রাতে যেমনটা হলো নেশন্স লিগের ফাইনালে। নেদারল্যান্ডসের রটারডামে স্পেনের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে সমান সমান হয়েও শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে হারতে হলো তাঁর দল ক্রোয়েশিয়াকে। এতে যে কষ্ট আরও বাড়ল মডরিচের। অথচ রিয়ালের হয়ে প্রায় সবকিছুই জেতা হয়ে গেছে লুকার। এদিন রানার্সআপ হওয়ার পর মাথা নিচু করে যখন মেডেল আনতে যান মডরিচ, তাঁর হৃদয় ভাঙার শব্দটা মানতে পারেননি উয়েফার প্রধান আলেকসান্দ্রার সেফরিন। বুকে জড়িয়ে কিছু সময় সান্ত্বনাই দেন তিনি। তাতে কি আর মন ভরবে।

একের পর এক ফাইনালে হার! দেশকে যে কিছুই উপহার দেওয়া হয়নি তাঁর। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। সেবার ফ্রান্সের কাছে হারতে হয় মডরিচদের। এর পর কাতারের মঞ্চে দ্যুতি ছড়িয়ে তৃতীয় হয়ে ফিরতে হয় বাড়ি। এবার নেশন্স লিগের ফাইনাল থেকে একরাশ হতাশা বুকে চেপে বিদায় নিতে হয়েছে, যা দেখে গ্যালারিতে থাকা সমর্থকদের চোখে জল গড়িয়ে পড়লেও মডরিচের চোখে জল নেই। এ যেন অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর হওয়ার মতো অবস্থা। কে জানে আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বড় আসরে দেখা যায় কিনা মডরিচকে।

যদিও ক্রোয়াট কোচ তাঁকে আরও চান। আগামী বছর জার্মানিতে ইউরো। সেখানেও যদি সঙ্গে পান মডরিচকে, মন্দ হয় না। যেমন আভাস দিয়েছেন তিনি, ‘এটা আমাদের কষ্টটা আরও বাড়াল। আমি দুঃখিত, এমন পরিবেশেও ট্রফিটি জিততে পারলাম না। তবে আমাদের গর্ব করার মতো উপলক্ষ আছে। তিনটি মেডেল; যেটা আমার কাছে সত্যিই বড় প্রাপ্তির। আর লুকা বলেছে, সে তার সিদ্ধান্তটা (অবসরের) নেবে। সেটাই হবে দারুণ কিছু। সে এই ম্যাচেও ভালো খেলেছে। ১২০ মিনিট বলের পেছনে দৌড়েছে। আমার বিশ্বাস, সে আমাদের সঙ্গে থাকবে। আসলে সে এই দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।’

এদিকে ২০১২ ইউরো ও তার আগে ২০১০ বিশ্বকাপের পর এটা স্পেনের জন্য বড় স্বস্তির। যেমনটা বলেছেন কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তে, ‘আমি জানি, এই দলটি বেশ ভালো। আমি তাদের সর্বক্ষেত্রে জয়ী হতে দেখেছি। আমি খুবই আনন্দিত তাদের জন্য। এই স্টাফ, স্পেন এবং খেলোয়াড়দের জন্য অনেক বেশি খুশি। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ থেকে আমরা প্রেরণা নেব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.