ঈদে নতুন শাড়ি কেনা হয়নি কাঙালিনী সুফিয়ার, কেনা হয়নি চিনি–সেমাই

0
138
কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশের মানুষ তাঁকে চেনেন। গান নিয়ে ছুটেছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। দর্শকের ভালোবাসায় পেয়েছেন দেশি ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। গান নিয়ে জীবন কাটানো সেই গায়িকা কাঙালিনী সুফিয়ার ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। নেই ঈদের কেনা নতুন পোশাকের গন্ধ। নেই চিনি–সেমাই কেনার অর্থ। কোনো রকমে ঈদটা কাটিয়ে দিতে চায় কাঙালিনী সুফিয়ার পরিবার।

এমন দুঃসময় আগে কখনো আসেনি কাঙালিনী সুফিয়ার ঘরে। ভাবেননি নতুন একটা শাড়ি ছাড়া শেষ বয়সে ঈদ কাটবে। নানা অসুস্থতা ও বয়সের ভারে ক্লান্ত সুফিয়ার কথা বলতে কষ্ট হয়। তাঁকে কল করলে মেয়ে পুষ্প বেগম ফোন ধরেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায়। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ‘ঈদ কোথায় করবেন?’ প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘গরিবের আর কিসের ঈদ! সাভারেই আছি। আমাদের ঘরে কোনো ঈদ নেই। ঈদের কোনো বাজার করতে পারিনি। মায়ের জন্য একটা সুতা পর্যন্ত কিনতে পারিনি। কারও কিছুই কেনা হয়নি। মাকে একটা কাপড় দিতে পারলাম না। খুবই দুরবস্থায় আছি।’

কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত

পুষ্প বেগম জানালেন, চিনি–সেমাই কেনার মতো আর্থিক অবস্থাও তাঁদের নেই। ঈদের দিনটি কীভাবে কাটাবেন, সেটাও ঠিক বুঝতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের শরীরের অবস্থা ভালো না। মায়ের চিকিৎসার খরচই চালাতে পারি না। আপনারা এসে দেখে যান, আমি সত্য নাকি মিথ্যা বলছি। আপনারা আসেন। আমি তো মিথ্যাও বলতে পারি!’

কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত

গায়িকা কাঙালিনী সুফিয়ার সঙ্গে মেয়ে পুষ্পাসহ থাকেন নাতি–নাতনিরাও। জানা গেল, এখন ঘরের মধ্যেই নিজের মতো করে চলাফেলা করতে পারেন কাঙালিনী সুফিয়া। বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকেন। পুষ্পা বলেন, ‘অসুস্থ শরীরে কীভাবে ভালো থাকবে! ওষুধ খেতে পারলে কিছুটা ভালো থাকেন। কিন্তু রোজার শুরু থেকে এই এক মাস ওষুধ পর্যন্ত কিনতে পারছি না। দিন দিন মা আরও খারাপ হচ্ছেন। সামনে কেউ এলে চিনতেও পারেন না। মাঝেমধ্যে আমাকেও চেনেন না। বলে দিতে হয়, কে এসেছে। তারপর উত্তর দেন।’

কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত

কাঙালিনী সুফিয়ার জন্ম ১৯৬১ সালে। প্রকৃত নাম টুনি হালদার। গ্রামের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ১৪ বছর বয়সে মানুষের নজর কাড়েন। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনেরও নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তাঁর গানের গুরু গৌর মহন্ত ও দেবেন খ্যাপা। হালিম বয়াতির কাছেও গান শিখেছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। ‘কোন–বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.