যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে যেসব দেশ আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করেনি, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। বাংলাদেশ এই সময়ে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বড় কোনো অগ্রগতিও অর্জন করেনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২৩ সালের ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টের জন্য ১৪১টি দেশের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ৭২টি দেশ আর্থিক স্বচ্ছতা পূরণে ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করেছে। তবে ৬৯টি দেশ এই মানদণ্ড পূরণ করেনি, তবে এদের মধ্যে ২৫টি দেশ আর্থিক স্বচ্ছতার মানদণ্ড পূরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব ইকনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস অ্যাফেয়ার্স প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করতে হলে একটি সরকারকে অবশ্যই বাজেট–সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করতে হবে। এই দলিলপত্র অবশ্যই উল্লেখযোগ্যভাবে পূর্ণাঙ্গ এবং সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
এ ছাড়া, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের জন্য সরকার লাইসেন্স–সংক্রান্ত যেসব চুক্তি করে, তা অবশ্যই একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ১৪১টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিদেশি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। মার্কিন দূতাবাস, অন্যান্য সরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক গোষ্ঠীর কাছ থেকে তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, মার্কিন দূতাবাসগুলো তাদের মূল্যায়নকাজের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে অন্যান্য বিদেশি সরকার, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে।
ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বলা হয়েছে, আর্থিক স্বচ্ছতা সরকারি বাজেট সম্পর্কে জানতে একজন নাগরিকের জন্য জানালা হিসেবে কাজ করে এবং ওই নাগরিকেরা এর ফলে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে, যা আস্থা জোরদার করে।
বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য সময়ে সরকার তার নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব তৈরি করেছে এবং অনলাইনসহ জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে। এতে আরও বলা হয়, সরকার বছর শেষের প্রতিবেদন একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি।
ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাজেটে দেওয়া তথ্যকে সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়, যদিও বাজেটের দলিলপত্র আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা মেনে তৈরি করা হয়নি। ঋণের বাধ্যবাধকতা–সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়।
এতে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ হিসাব কর্তৃপক্ষ সরকারের হিসাব নিরীক্ষা করেছে, কিন্তু তাদের রিপোর্টে বাস্তব ফলাফল ছিল না এবং একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে তা জনসমক্ষে প্রকাশও করা হয়নি। স্বাধীন কর্মকাণ্ড চালানোর যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে, তা এই সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের ছিল না।
এ ছাড়া, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ–সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে সাধারণ তথ্য ধারাবাহিকভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতা ভালো করা জন্য ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে ছয় দফা পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বছর শেষের রিপোর্ট একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা, বাজেটের দলিল তৈরিতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করা, নির্বাহী দপ্তরের জন্য বাজেট বরাদ্দ ভেঙে ভেঙে উল্লেখ করা, হিসাব কর্তৃপক্ষের কাজের স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক মানের করা ও প্রয়োজনীয় সম্পদ বরাদ্দ করা, নিরীক্ষা প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ–সম্পর্কিত চুক্তিগুলোর সাধারণ তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা।