পাকিস্তানে হঠাৎ কেন হামলা চালাল ইরান

0
130
ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে অভিযান চালিয়েছে ইরান, প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

ইরানের বিরুদ্ধে আজ বুধবার সকালে গুরুতর অভিযোগ এনেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ বিমান হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ সামনে আনার পর প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ পাকিস্তানের ভূখণ্ডে কেন হামলা চালাল ইরান? মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আগে থেকেই উত্তপ্ত। এর মধ্য কী এমন ঘটল যে তেহরান প্রতিবেশী দেশের ওপর হামলা চালিয়ে বসল?

২০১২ সালে জইশ আল-আদল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইরানে কালো তালিকাভুক্ত একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলার পেছনে জইশ আল-আদলকে দায়ী করা হয়।

কয়েক দিন ধরে ইরাক ও সিরিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে ইরান। তেহরানের দাবি, ‘ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরাক ও সিরিয়ার পর একই কারণে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ইরানের এই হামলা চালাল।
যদিও ‘বিনা উসকানিতে আকাশসীমা লঙ্ঘনের’ ঘটনায় ক্ষোভ জানাতে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে পাকিস্তান সরকার। এমন হামলাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

হামলার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে ইরান সরকার পুরোপুরি নিশ্চুপ। তবে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নুর জানিয়েছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল-আদলের সদর দপ্তর ধ্বংস করা হয়েছে।

২০১২ সালে জইশ আল-আদল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইরানে কালো তালিকাভুক্ত একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলার জন্য জইশ আল-আদলকে দায়ী করা হয়।

হামলার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে ইরান সরকার পুরোপুরি নিশ্চুপ। তবে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নুর জানিয়েছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল-আদলের সদর দপ্তর ধ্বংস করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সম্প্রতি ‘সন্ত্রাসীদের’ স্থাপনা ও তাদের ‘গোয়েন্দা সদর দপ্তরে’ হামলা চালাচ্ছে ইরান। এ জন্য সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের এসব হামলা আগে থেকে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যকে নানা সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। অসহায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। এর জেরে ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

এখন নিজেদের ভূখণ্ডে ইরানের হামলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে কোথায় হামলা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম বলছে, হামলা হয়েছে ইরানের সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জগুরের পাশে। বেলুচিস্তান প্রদেশের সঙ্গে ইরানের প্রায় এক হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে।

হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাকার এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রয়েছেন। সেখানেই সম্মেলনের এক ফাঁকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

ইরান আগেও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্তসীমান্ত অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এবারের মতো কোনো অভিযানের কথা মনে করতে পারছি নামাইকেল কুগেলম্যান, ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক

এই বৈঠকের রেশ না কাটতে হামলার খবর সামনে এসেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর পরিণাম গুরুতর হতে পারে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘হামলার ঘটনায় দুই নিষ্পাপ শিশু নিহত হওয়ার পাশাপাশি তিন মেয়ে আহত হয়েছেন।’

আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশের পরপরই ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পাকিস্তান সরকার।

এর আগে গতকাল রাতে ইরানের নুর সংবাদমাধ্যমের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘মিনিটখানেক আগে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে তথাকথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সদর দপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে। রকেট ও ড্রোন হামলায় এসব সদর দপ্তর ধ্বংস হয়ে গেছে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের রাস্কে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ইরানের অন্তত ১১ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান। ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল জইশ আল-আদল। জাতিসংঘের দৃষ্টিতেও জইশ আল-আদল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
ইরান ও পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রায়ই পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকে। বলা হয়ে থাকে, একটি দেশে ঘাঁটি তৈরি করে জঙ্গিরা অন্য ভূখণ্ডে হামলা চালায়। তবে এসব ঘটনায় দুপক্ষের সরকারি বাহিনীগুলোর জড়িত হওয়ার ঘটনা বিরল।

এ বিষয়ে এক্স বার্তায় ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ইরান আগেও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্তসীমান্ত অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এবারের মতো কোনো অভিযানের কথা মনে করতে পারছি না।’

সতর্ক করে কুগেলম্যান আরও বলেন, এটা পাকিস্তান ও ইরানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ডোবাতে পারে। এমনকি সবচেয়ে ভালো সময়েও এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুতর সংকট তৈরি করতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.