দারিদ্র্য এখন নগরমুখী

0
139

# গত এক যুগে গ্রাম এলাকায় যে হারে দারিদ্র্য কমেছে শহরে কমেনি সে হারে # শহরে ভোগ বৃদ্ধির হার নিম্ন আয়ের তুলনায় উচ্চ আয়ের পরিবারে অনেক বেশি # শহরের বৈষম্যের কারণেই সার্বিকভাবে জাতীয় বৈষম্যের ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে না

 

 

গ্রাম এবং শহরে আগের তুলনায় দারিদ্র্য কিছুটা কমেছে। তবে দারিদ্র্য দূরীকরণের গতি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমে এসেছে। আবার গ্রামে যে হারে দারিদ্র্য কমেছে, শহরের সে হারে কমেনি। শহরে দারিদ্র্য কমার হার কম। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে শহরে ধনী ও গরিবের মধ্যে প্রকট বৈষম্য। শহরকেন্দ্রিক সব উন্নয়ন প্রকল্পের সমান সুফল পায়নি নগর দরিদ্ররা। এ ছাড়া নদীভাঙনসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাবের কারণে কাজের সন্ধানে গ্রামের দরিদ্র্যরা শহরে আসছে। এতে নগর দরিদ্র্য তেমন একটা কমছে না।

সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দুর্বলতা ও প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়ার প্রবণতা দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে বিপদে ফেলেছে, যা বাংলাদেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। উন্নয়নে গ্রাম এবং শহরের ব্যবধান আরও বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে গ্রামে ভোগ বৃদ্ধির হার নিম্ন আয়ের ৪০ শতাংশ এবং বেশি আয়ের ৬০ শতাংশ পরিবারের ক্ষেত্রে সমানই ছিল। তবে একই সময়ে শহরে এ চিত্র ছিল ভিন্ন। উচ্চ আয়ের ৬০ শতাংশ পরিবারে এ হার ছিল ৪০ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবারের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। এই বিপরীতমুখী প্রবণতার কারণে জাতীয় বৈষম্যের ক্ষেত্রে কোনো গুণগত পরিবর্তন আসেনি।

এমন বাস্তবতার মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস। ১৯৯৩ সাল থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম আয়ের মানুষ অতিদরিদ্র। ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান অর্জনের অক্ষমতাকে দারিদ্র্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে থাকে বিশ্বব্যাংক।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ আমাদের সময়ের একটি চ্যালেঞ্জ।’ দিবসটি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, প্রাচুর্যে ভরা এই বিশ্বে দারিদ্র্যের কোনো জায়গা থাকা উচিত নয়। তা সত্ত্বেও আমরা আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস পালন করি– কারণ, এখনও প্রায় ৭০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ২ দশমিক ১৫ ডলারেরও কম খরচে দিনাতিপাত করছে। ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত। আরও কয়েকশ কোটি মানুষ রয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা এবং জ্বালানি, চাকরি, আবাসন ও সামাজিক সুরক্ষা সুবিধার বাইরে। একটি সেকেলে, অকার্যকর ও অন্যায্য বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দারিদ্র্য দূরীকরণে ও এসডিজি অর্জনে বিনিয়োগ করতে বাধা দেয়। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালেও প্রায় ৫০ কোটি মানুষ অতি দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত করবে।

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের নগরমুখী প্রবণতার প্রমাণ পাওয়া যায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামে ২০১০ সালে দারিদ্র্য ছিল ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা ২৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসে। ২০২২ সালে গ্রামীণ দারিদ্র্য দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। অন্যদিকে শহরে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২০২২ সালে তা ১৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ প্রথম ছয় বছরে গ্রামের দারিদ্র্য কমছে ১২ দশমিক ৫ শতাশ হারে। পরের ছয় বছরে কমেছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। প্রথম ছয় বছর আর শেষ ছয় বছরের মধ্যে দারিদ্র্য কমেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। যেখানে শহরে দারিদ্র্য কমেছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হারে।

অতিদারিদ্র্যের হার কিছুটা কমেছে

 

কভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যেও দেশে অতি দারিদ্র্যের হার কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দেশে অতি দারিদ্র্যের হার এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সময়ে দারিদ্র্যের হার কমেছে। দারিদ্র্যের হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ২৫ জুন নতুন এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিবিএসের কর্মকর্তারা মনে করে, দারিদ্র্য বিমোচনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.