একটি পরিবারের সবাই যদি একই সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে কে কার দেখভাল করবেন? তার ওপর সেটি যদি হয় ডেঙ্গু জ্বরের মতো মারাত্মক কিছু।
পরিবারের একজন অসুস্থ হলেই অন্যরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। অসুস্থ ব্যক্তিটি কী খেলে একটু ভালো অনুভব করবে, কখন তাকে ওষুধ দিতে হবে, কখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে—নানা দিক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আপনজনেরা। কিন্তু একটি পরিবারের সবাই যদি একই সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে কে কার দেখভাল করবেন? তার ওপর সেটি যদি হয় ডেঙ্গু জ্বরের মতো মারাত্মক কিছু।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যদি যেতেই হয় কোনো পরিবারকে, সে ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের খেয়াল রাখা ছাড়া উপায় নেই। বয়সে তরুণ ও মধ্যবয়সীদের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে খানিকটা কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কয়েক দিন পেরোনোর পর তাঁরা অন্যের কিছুটা খেয়াল রাখার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পান। তা ছাড়া যিনি এবারই প্রথম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর অসুস্থতার মাত্রা কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনিও প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে অন্যদের দেখভাল করতে পারেন। যাঁর জ্বর সেরে যাওয়ার পর দুই দিন পেরিয়ে গিয়েছে এবং কোনো জটিলতা হয়নি, তিনিও অন্যদের খানিকটা যত্ন নিতে পারবেন। তবে এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের প্রত্যেকেরই নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, যাতে অন্য কারও ওপর চাপ সৃষ্টি না হয়। আর দায়িত্বগুলো ভাগ করে নিতে হবে। যাঁরাই অন্যদের দেখভালের দায়িত্ব নেবেন, তাঁদের অতটা শারীরিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না, সেই বিষয়েও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মতলেবুর রহমান।
বয়োজ্যেষ্ঠ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি
কারও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ, দীর্ঘমেয়াদি লিভারের রোগ প্রভৃতি থাকলে বাড়তি খেয়াল রাখতেই হবে। বিপদচিহ্ন সম্পর্কে তাঁকে ধারণা দিয়ে রাখুন। বারবার তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁকে দেখে আসতে অসুবিধা হলে তাঁর ঘরেই কারও থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। সবাই অসুস্থ হলেও তিনি যাতে নিজের অসুবিধার কথা অন্যদের জানাতে সংকোচ না করেন। তাঁর বিষয়ে চিকিৎসককে আলাদাভাবে জানাতে হবে নিয়মিত। বয়োজ্যেষ্ঠ যেকোনো ব্যক্তি, যাঁর অন্য কোনো রোগ নেই, তাঁর জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।
শিশুদের জন্য
শিশুরা নিজেদের সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না। বিপদচিহ্ন কিংবা করণীয় সম্পর্কে তাদের বলে খুব একটা লাভ না-ও হতে পারে। তাই শিশুকে কাছেই রাখুন। তার মনের মতো খাবার এবং অন্যান্য ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে বুঝিয়ে বলুন আপনার শারীরিক কষ্টের কথা।
আরও যা
এমন খাবার রাঁধুন, যা প্রস্তুত করা সহজ এবং যা সবাই খেতে পারবে।
ডেঙ্গু জ্বরে যাদের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের চিকিৎসা হাসপাতালেই করা উচিত। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরও বাড়িতে তাদের দেখভাল করার প্রয়োজন পড়ে।
কয়েকটা দিনের জন্য নিকটাত্মীয় কিংবা কাছের কোনো বন্ধুকে আপনাদের কাছে এসে থাকার অনুরোধ করতে পারেন। বিপদেই তো বন্ধুর পরিচয়। আত্মীয়েরও বটে। বাজার-সদাইয়ের জন্যও কারও সাহায্য নিন।