বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের বিখ্যাত পামজাতীয় উদ্ভিদ হলো গোলপাতা। এ গাছকে ঘিরে সুন্দরবন অঞ্চলের জনবসতির ইতিহাস–ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। সুন্দরবনঘেঁষা এলাকা ছাড়াও বাগেরহাট জেলা সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল ও চিতলমারী এলাকার নদীনালা ও খালবিলের পাশে জন্মে এ প্রজাতির গাছ। এ গাছের পাতা ঘর ছাউনির কাজে ব্যবহৃত হয়। গোলপাতাগাছে তালের শাঁসের মতো একধরনের ফল হয়। স্থানীয় মানুষের কাছে তা গোলফল নামেই পরিচিত। উপকূলবর্তী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রথমে শখের বশে হলেও পরবর্তী সময়ে এটিকে নিত্যদিনের ফল হিসেবেই আপন করে নেয়।
বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে ভ্যানভর্তি গোলফল নিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন ষাটোর্ধ্ব আবদুর রহমান শেখ। পর্যটকদের প্রশ্নে আবদুর রহমানও সোৎসাহে প্রত্যেককে বর্ণনা করেন বিচিত্র সেই ফলের বিস্তারিত ইতিহাস।
ফলের ওপর দায়ের কোপ বসিয়ে আবদুর রহমান বলতে থাকেন, ‘সুন্দরবনের গোলপাতাগাছের নাম শুনছেন তো? সেই গোলপাতার ফল এটা। শক্ত অথবা নরম; তালের শাঁসের চেয়েও পুষ্টিকর ফল। এ ফলে শরীরের নানান ব্যথা, ডায়বেটিস, চর্মরোগে ওষুধের কাজ করে। এটি খাইলেই শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে এসে এ ফল খায়। প্রতি আঁটিতে ৫০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত ফল হয়। প্রতিটি ফল ১০ টাকা দামে বিক্রি করি। এতেই এখন সংসার চলে।’
আবদুর রহমান ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনায়। জানা যায়, বছর দশেক আগে গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়ে দুই পা হারান তিনি। পঙ্গু অবস্থায় ভ্যান টেনে ছয় ছেলেমেয়েসহ সংসারের খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে গোলফল বিক্রির চিন্তা মাথায় আসে তাঁর। বছর পাঁচেক আগে ছোট ছেলেকে নিয়ে আশপাশের এলাকার নদীর পাড়ে জন্মানো গোলপাতাগাছ থেকে ফলের কাঁদি কেটে এনে ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি।
তালসদৃশ ফলটি নিয়ে পর্যটকদের কাছে অচিরেই বেশ ভালো সাড়া পান আবদুর রহমান। লম্বায় তিন থেকে চার ইঞ্চি ফলগুলো দেখতে কিছুটা ছোট আকৃতির নারকেলের মতো। গোলফলের এক কাঁদিতে ৫০ থেকে ১৫০টি ফল থাকে। শক্ত খোসা কেটে অপরিপক্ব নরম আঁটিগুলোকে খাওয়া হয় ফল হিসেবে। সাদা রঙের আঁটিগুলো স্বাদে অনেকটা তালশাঁসের মতোই। ঘ্রাণ কিছুটা অন্য রকম।
জানা যায়, গোলফল বিক্রি করে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করেন আবদুর রহমান। ছুটির দিনে মসজিদে পর্যটকের ভিড় বাড়লে দৈনিক বিক্রি গড়ায় তিন থেকে চার হাজার টাকাতেও। এক প্যাকেট বিক্রি করেন ৫০ টাকায়। বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গোলফল সংগ্রহ করেন তিনি। স্থানীয় কারও বাড়িতে গোলগাছ থাকলে সেখান থেকে প্রতি কাঁদি কিনে আনেন ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দৈনিক দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে বসে গোলফল বিক্রি করেন তিনি।
লেখক:দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়