প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। এ দেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের আপামর জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণে সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বরাবরের মতো বাংলায় দেওয়া এই ভাষণে তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা পরিহার, জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক চালু, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), সন্ত্রাসবাদ এবং সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সবার মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। সবাইকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া ও সুবিচার নিশ্চিত করতে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজ এই অধিবেশনে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা সংকটের দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা চলমান থাকলে এটি আমাদের আঞ্চলিক এবং
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যুত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার কারণে মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে, তা অনুভব করতে পারি। তাই বিশ্বনেতাদের কাছে আবেদন, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও সংঘাতের পথ পরিহার করে আসুন, আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি।’
নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন
জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পর নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আরোপ শুরু প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে ভয় পাওয়া বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এবার বিরোধী দলের কথাও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের বলব, একসময় ১০ হোন্ডা ২০টা গুন্ডায় নির্বাচন হতো। এখন সেই পরিবেশ নেই। বিএনপি এক কোটি ভুয়া ভোটার করেছিল। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে দেড় মাসও টিকতে পারেননি, জনগণের আন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কারও ওপর নির্ভর করে নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণ ভোট দিলে আবার ক্ষমতায় আসবে।