৩০ টাকার ডাব বিক্রি ২০০ টাকায়

0
120

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব রহমতপুর গ্রামের চাষি গৌতমের রয়েছে ৮২টি নারকেল গাছ। তিনি জানান, কয়েক বছরের মতো এবারও প্রতি পিস ডাব ৩০ টাকা দরে ডাব বিক্রি করেছেন। একই তথ্য জানান ইউনিয়নের কৃষক রুস্তম আলীও। সম্প্রতি শতাধিক গাছের ডাব তিনি বিক্রি করেছেন পিস ৩০ টাকায়। অথচ সেই ডাব বিভিন্ন হাত ঘুরে রাজধানীতে এসে দাম হয়ে যাচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। চলতি বছর সারাদেশে ব্যাপক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাবের চাহিদা বেড়ে গেছে। মূলত এই অতিরিক্ত চাহিদারই সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।

বাবুগঞ্জের শায়েস্তাবাদ এলাকার মৃধারহাটের কৃষকরা জানান, বর্ষা মৌসুমের অজুহাতেও ফড়িয়ারা ২০ থেকে ৩০ টাকা মূল্যে প্রতি পিস ডাব কিনে নিচ্ছে। এ মৌসুমে নারকেল গাছ ভেজা থাকে। তাই পিছলে পড়ার ভয়ে সহজে কেউ গাছে উঠতে চান না। ডাব কাটার লোক পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে কৃষক ও স্থানীয়রা ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কাছে কম দামে বিক্রি করেন।

অনুসন্ধানও বলছে, বাজারে ডাবের চাহিদা এবং বিক্রিমূল্য যতই বাড়ুক না কেন কৃষক পর্যায়ে দাম বাড়েনি। সেখানে সিন্ডিকেট করে দুই বছর আগের নির্ধারণ করা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দরেই ডাবের পিস কিনে নিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারীরা। এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলায় পাইকারিতে ডাব কেনা ব্যবসায়ী মো. শাহিনের দাবি, ছোট-বড় মিলে গড়ে ৩০ টাকা করে আমরা ডাব কিনলেও এর পেছনে অনেক খরচ আছে। গাছ থেকে পাড়ার শ্রমিক খরচ, ভ্যানে পরিবহন ইত্যাদি মিলিয়ে ডাবপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ পড়ে। আমরা আড়তে নিয়ে বর্তমানে বড় সাইজের ডাব ১০০ টাকা পিস হিসাবে বিক্রি করি। ছোট ও মাঝারি সাইজের ডাব বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। শ্রমিক ও পরিবহন খরচ থাকলেও ৩০ টাকায় কেনা ডাবের দাম কীভাবে তিন গুণ হয়ে যায়– এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি শাহিন।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারে ২৫ বছর ধরে ডাব বিক্রি করেন জয়পুরহাটের সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, বর্তমানে আকারভেদে প্রতি পিস ডাব ৮০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বাড়ায় আড়ত ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বাজারের দোকানির চেয়ে হাসপাতালগুলোর সামনে যারা ডাব বিক্রি করছে, তারাই বেশি দাম রাখছে।

সিরাজুলের কথার সত্যতা পাওয়া যায় মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, উত্তরা, ফার্মগেট, পলাশীর মোড়, পান্থপথের মোড়সহ কয়েকটি হাসপাতালের সামনে। এসব জায়গায় অনেক ডাব বিক্রেতাই রসিদ দেখাতে পারেননি। তারা জানান, পাইকারদের কাছ থেকে ডাব কেনেন আরেক ব্যবসায়ী। তারা সেই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পরে কিনে আনেন। ফলে তারা কোনো রসিদ পাননি। এসব ব্যবসায়ী এক দামে ডাব বিক্রি করছেন। সাইজ অনুযায়ী ১৫০, ১৮০ ও ২০০ টাকায় মিলছে ডাব।

কারওয়ান বাজারের আড়তে টানানো হয় না মূল্যতালিকা এইচআরসি ভবনের সামনে ১২টি প্রতিষ্ঠানে পাইকারি মূল্যে ডাব বিক্রি করা হয়। আড়ত ঘুরে দেখা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানেই ডাবের মূল্যতালিকা টানানো নেই। এম এ মজিদ ট্রেডার্সের ম্যানেজার নেছার আহমেদ বলেন, ‘ব্যাপারীদের ডাবের মূল্য ব্যাংকে পাঠানো হয়। গাড়ি ভাড়া দিয়ে দিই। এর পর তো আর কিছু প্রয়োজন হয় না।’ মূল্যতালিকা ও রসিদ না থাকায় সম্প্রতি ইউসুফ এন্টারপ্রাইজ ও ইউনুস এন্টারপ্রাইজ নামে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ডাবের দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু ডাবের দাম নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও হাজারীবাগে অভিযান চালানো হয়। অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘অভিযানে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ ডাবের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না আসা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। ঢাকার মতো এদিন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ফরিদপুর এবং নওগাঁতেও অভিযান পরিচালিত হয় বলে জানা গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.