সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে: আইনমন্ত্রী

0
138
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে অংশীজনদের ডেকে আলাপ-আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার এক দিন পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

গতকাল সোমবার ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’–এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই আইনের খসড়াটি অনুমোদন করা নিয়ে আলোচনা চলছে।

আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) আমি বলেছিলাম, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করব। সাইবার নিরাপত্তা আইন হওয়া সত্ত্বেও এটি কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে করা হয়েছে। আমরা বলি নাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে একদম বাদ দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছি। কিন্তু আদতে (কাগজপত্রে) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছি।’

বিলটি এখন জাতীয় সংসদ তোলা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর সংসদ অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে। এবার যাতে সংসদ অধিবেশনে উঠতে পারে, সে জন্যই গতকাল মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অবশ্যই সংসদীয় কমিটিতে অংশীজনদের ডেকে প্রস্তাবিত এ আইন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে (ওয়েবসাইটে খসড়া দেওয়ার পর) যেসব মতামত দেওযা হয়েছে, সেগুলো একসঙ্গে করে সবকিছু সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে। যাঁরা বক্তব্য জানাতে চাচ্ছেন, তাঁদের সংসদীয় কমিটিতে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। গতবারের (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার সময়) মতো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে যেসব মতামত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে এবং আরও নেওয়া হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা নিয়ে যা বললেন মন্ত্রী

নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত হলেও অনিষ্পন্ন মামলাগুলো পুরোনো আইনেই চলবে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে সাজা কমানো হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পুরোনো আইনে বেশি সাজার বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে, অপরাধ করার সময় যে আইন বলবৎ ছিল, সেই আইনেই বিচারকার্য হবে এবং সেই আইনে যে সাজা ছিল, সেই সাজাই দিতে হবে। সেখানে একটি কথা আছে (৩৫ অনুচ্ছেদে), সেটি হচ্ছে যদি নতুন আইনে সাজা বেশি হয়, তাহলে সেই সাজা দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ যে আইনে অপরাধ করেছে অথবা অপরাধ করার সময়ে যে আইন বলবৎ ছিল, সেই আইনে যে সাজা, সেটা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত আছে, কোনো ভিন্নতর সাজা দেওয়া যাবে না।

তবে সাজা যেন কম হয়, অর্থাৎ নতুন আইন অনুযায়ী সাজা হয়, সেটা কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানান আইনমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত আইন নিয়ে অনেকেই ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’ এবং ‘যে লাউ সেই কদু’ প্রবাদের অবতারণা করছেন বলে আইনমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এর জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় সাজা ছিল ১০ বছর। সেই সাজা কমিয়ে করা হয়েছে ৫ বছর। আর ২১ ধারার উপধারা-২–এ বলা ছিল, এটি যদি পুনর্বার করা হয়, তাহলে সাজা দ্বিগুণ হবে। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। ২৮ ধারায় মানহানির জন্য সাজা ছিল তিন বছর। সেটায় কারাদণ্ড বাদ দিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। এগুলো কি পরিবর্তন নয়, সে প্রশ্ন করেন আনিসুল হক।

এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারা অজামিনযোগ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে শুধু কারিগরি ধারার অপরাধকে অজামিনযোগ্য করে বাকি সব কটি জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এগুলো কি পরিবর্তন নয়?

পরিবর্তনের যেকোনো সংজ্ঞায় এগুলো পরিবর্তন দাবি করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সে জন্য আমি বলেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যেসব আপত্তি ছিল, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনে সেসব ব্যবস্থা করেছি।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ধারা ১৪টি। ধারাগুলো হলো ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ ধারা। ৭ আগস্ট সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার সময় সেখান থেকে ৮টি ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছিল। এগুলো হলো ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারা। আর এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় নতুন করে ২১ ও ৩০ ধারাও জামিনযোগ্য করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে জামিনযোগ্য ধারাগুলো হলো ১৮ (১) (খ), ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৪৬। নতুন করে জামিনযোগ্য করা ২১ ধারায় সাজা কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে অর্থদণ্ড সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা আগের মতোই রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই ধারায় সাজা ছিল সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.