সরকারি সেবার ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত ও টেকসই করতে এটুআইকে সংস্থায় রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন আইন।
প্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোর আপত্তি থাকা কয়েকটি ধারা রেখেই প্রকল্প অ্যাসপায়ার টু ইনোভেটকে (এটুআই) সংস্থায় রূপ দিতে আইন পাস হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন, এই ধারাগুলো বাদ দেওয়ার বিষয়ে সবার সম্মতি ছিল।
এখন আগামী সংসদ অধিবেশনেই নতুন আইনটি সংশোধনের জন্য বিল আনার দাবি তুলেছে প্রযুক্তি সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, নতুন আইনের ফলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি প্রতিযোগিতা শুরু হবে। যা তাদের সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করাবে।
সরকারের দীর্ঘদিনের প্রকল্প এটুআই। এটা এখন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীনে। সরকারি সেবার ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত ও টেকসই করার লক্ষ্যে একে সংস্থায় রূপ দেওয়া হচ্ছে। গত ৫ জুলাই ‘এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) বিল-২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এটুআই আইনের ১৬ ধারায় বলা আছে, সংস্থা হিসেবে সেবা বা পরামর্শ দেওয়ার বিনিময়ে ফি নিতে পারবে এটুআই। এ ছাড়া ২১ ধারায় আছে সংস্থা হিসেবে এটুআই প্রয়োজনে কোম্পানি গঠন করতে পারবে। এ দুটি ধারা নিয়েই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংশ্লিষ্টদের আপত্তি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পাঁচটি সংগঠন অনেক দিন ধরেই এই ধারাগুলোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আইনটি পাসের আগে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভা হয় ১৮ জুন। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পাঁচটি সংগঠনের সভাপতিরা অংশ নেন।
এ সভায় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদও উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়, এটুআই কোনো কারবারে অংশগ্রহণ করতে পারবে না, কোম্পানি গঠন করতে পারবে না এবং বোর্ডে সব আইসিটি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি থাকবে। কিন্তু বিল পাসের সময়ে মূল আপত্তির ধারাগুলো রয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, সংগঠনগুলোর আপত্তির জায়গা বাদ দেওয়ার সুপারিশ তাঁর নিজেরও ছিল। কিন্তু সংসদীয় কমিটি থেকে যেভাবে এসেছে, সেভাবেই বিলটি সংসদে পাঠানো হয়েছে।
তবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিলের আপত্তির জায়গা নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোর সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হচ্ছে। তিনি সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথাও বলেছেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, আইসিটি বিভাগের আরও সংস্থার অধীনে কোম্পানি আছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে হয়েছে। এটুআইও যদি কোম্পানি করতে চায়, তবে সেটিও মন্ত্রিসভার অনুমোদনে হবে।
যে পাঁচটি সংগঠন ধারাগুলো নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। কমিটির আরেক সদস্য ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘পাঁচটি সংগঠন যে দাবি করছে, তা সঠিক। তাঁদের দাবিগুলো সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মেনে নেওয়া হয়েছিল। তিনি (আইসিটি প্রতিমন্ত্রী) যেভাবে পেশ করেছেন সেভাবেই পাস হয়েছে।’
আইন পাস হওয়ার পর গত ১০ জুলাই সংগঠনগুলো সংবাদ সম্মেলন করে নতুন আইনটি সংশোধনের দাবি জানায়। সংগঠনগুলো বলছে, আইন পাস হওয়ার পর সরকার তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তারা যে ধরনের ব্যবসা করছে, সরকারও তেমন ব্যবসা করতে যাচ্ছে।
এর ফলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি প্রতিযোগিতা শুরু হবে। আইন সংশোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার বরাবরও চিঠি দিয়েছে এই পাঁচ সংগঠন। পরে ২২ জুলাই বিপিও সামিটে গিয়ে সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, আইন সংশোধনের সুযোগ আছে। সংসদে তা উত্থাপন করতে হবে। তাঁদের চাওয়া, আগামী সংসদ অধিবেশনেই যেন বিলটি সংশোধন করা হয়।