ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে দায়ের করা মামলায় অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। আদেশে কলকাতা হাইকোর্ট বলেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ভোটের ফল (জয়ী প্রার্থী) চূড়ান্ত কি না, তা আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করবে।
মামলার শুনানি নিয়ে গতকাল বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চ এই অন্তর্বর্তী আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যের নাম বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য। ২০ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের গতকালের আদেশের ফলে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের ভাগ্য কার্যত ঝুলে গেল।
৮ জুলাই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। ১১ জুলাই ভোট গণনা করা হয়। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়। সহিংসতা এখনো থামেনি। নির্বাচনী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল জয় পেয়েছে।
গতকাল কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলারও শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি উদয় কুমারের বেঞ্চে এই শুনানি হয়। এই মামলার শুনানিতেও আদালত কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন।
রাজ্যের এই ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কো-অর্ডিনেটিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিএসএফের আইজি তাঁর প্রতিবেদনে সহিংসতা কথা উল্লেখ করেছেন। এই প্রতিবেদন দেখার পর হাইকোর্ট তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, অভিযোগ গুরুতর, যা রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, যদি বিএসএফের আইজির প্রতিবেদন সত্য হয়, তা হলে তিনি বলতে বাধ্য হচ্ছেন, আদালতের কোনো নির্দেশই রাজ্য নির্বাচন কমিশন কার্যকর করেনি। অভিযোগে স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সহযোগিতা করেনি নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি জেনেশুনে নির্দেশ অমান্য করার শামিল।
শুনানি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তাদের বক্তব্য হলফনামাসহ আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখে (২০ জুলাই) আদালত হলফনামা দেখবেন। তারপর পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
সহিংসতা রোধে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন প্রশ্নে হাইকোর্ট রাজ্যের মুখ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বিএসএফের আইজির সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে সব রকমের সহযোগিতা করা হয়, সে জন্য প্রতিটি জেলায় বার্তা পাঠাতে হবে।
এ ছাড়া যেসব স্কুলে ভোট নেওয়া বা গণনা করা হয়েছে, সেগুলোর এখন কী হাল, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারকে আগামী শুনানিতে প্রতিবেদন দিতে হবে।
আদালত বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয়।
শুনানিতে বিজেপির আইনজীবী গুরু কৃষ্ণকুমার বলেন, তথ্য-প্রমাণের আলোকে তাঁরা অন্তত ৬ হাজার কেন্দ্রে ফের ভোট গ্রহণের আবেদন জানিয়েছিলেন।
বিজেপির আরেক আইনজীবী প্রিয়াংকা টিবরেওয়াল বলেন, ভোটের পরও রাজ্যে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
বিজেপির আরেক আইনজীবী শমীক বাগচি বলেন, এখন ভোট-পরবর্তী হিংসা-সহিংসতা ঠেকানো জরুরি। তা না হলে আরও মানুষের প্রাণ যাবে। তিনি ৫০ হাজার বুথে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানান।