বিমান হামলায় লন্ডভন্ড ফিলিস্তিন

ইসরায়েলের অভিযান

0
228

ইসরায়েলে সর্বশেষ হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে গেল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন শহর। দেশটির বিমান হামলায় জেনিনের ৮০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। এদিকে গতকাল বুধবার জেনিন থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর পশ্চিম তীরের গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অর্থাৎ ফিলিস্তিনের এক এলাকায় অভিযান স্তিমিত হয়ে আসার পর আরেক এলাকায় অভিযান শুরু করল ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলে বিমান হামলা শুরু হয় গত রোববার রাতে। এই হামলা শুরুর পর থেকে ১২ ফিলিস্তিনি ও এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক শর বেশি ফিলিস্তিনি। জেনিনের ডেপুটি মেয়র কামাল আবু আল-রাব বলেন, বাড়ি ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেনিনের শরণার্থী শিবিরের ৮০ শতাংশ ঘর হয় ধ্বংস হয়েছে, নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নয়তো পুড়ে গেছে।

আবু আল-রাব বলেন, ইসরায়েলের এই অভিযানে যানবাহন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জেনিনে ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর সেখানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। তারা জানায়, সেখান থেকে ৫০০ পরিবার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোট তিন হাজার ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নিয়েছে তারা।

জেনিনের শরণার্থী শিবির ঐতিহাসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করলে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে হাজারো ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হন। এই বাস্তুচ্যুতদের মধে৵ অনেকেই জেনিনের শরণার্থী শিবিরে থাকতেন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় জ্বলছে আবাসিক এলাকা। গতকাল গাজা সিটিতে
ইসরায়েলি বিমান হামলায় জ্বলছে আবাসিক এলাকা। গতকাল গাজা সিটিতে, ছবি: এএফপি

জেনিনে অভিযান শুরুর পর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, জেনিনের সশস্ত্র ব্যক্তিদের ধরতে তারা অভিযান চালাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি আসলে ভিন্ন। সেখানে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় সব বয়সী মানুষ আহত হয়েছেন।

সেখানকার হাসপাতালের মর্গে কাজ করেন কাশেম বেনিঘদার। তিনি জানান, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এত বড় হামলা তিনি দেখেননি।

জেনিনের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলেন ওয়ালেদ রাশে মানসুর। কুকুরের কামড়ের দাগ রাশেদের শরীরে ছিল। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের সেনারা আমাদের বাড়ি এসেছিল। দরজা ভেঙে তারা বাড়িতে প্রবেশ করে। সেনাদের সঙ্গে কুকুর তারা ছেড়ে দেয়। সেই কুকুর আমাকে আক্রমণ করেছিল।’

মানসুর বলেন, ২০০২ সালে তারা এই শরণার্থী শিবিরের অর্ধেক ধ্বংস করেছিল। এবার থেকে সেই বার বেশি ক্ষতি হয়েছিল বলে জানান তিনি। তবে তিনি এ–ও বলেন, ‘তবে আমরা এবার এটা আশা করিনি যে তারা এখানকার রাস্তাঘাটও ধ্বংস করে যাবে।’

জেনিনের শরণার্থী শিবিরের আরেক বাসিন্দা আহমেদ আবু বলেন, ইসরায়েলের সেনারা এই শিবির ধ্বংস করতে চান। তিনি বলেন, তাঁরা (ইসরায়েলের সেনারা) বলেছিলেন সশস্ত্র ব্যক্তিদের ধরতে তাঁরা সেখানে এসেছেন। কিন্তু সেই ব্যক্তিদের না ধরে সাধারণ মানুষদের হতাহত করে ফিরে গেলেন।

আরব বিশ্বের নিন্দা

ইসরায়েলের এই অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে ইরান, মিসর, জর্ডান, আরব লিগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ও দেশ। এ ছাড়া অভিযান শুরুর আগে থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামলা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে। তবে এই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ সামনে আসেনি। সর্বশেষ ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতিসংঘের মহাসচিব ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, আগামীকাল শুক্রবার এ নিয়ে বৈঠকে বসবেন তিনি।

গাজায় অভিযান

এদিকে জেনিনে অভিযান শেষ হতে না হতেই পশ্চিম তীরের গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের উপকূল থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এরপর গাজায় হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করেছে তারা।

আল জাজিরা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.