রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য সরকারকেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটা পথ বের করতে হবে, এ মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের যদি জনগণের ওপর কোনো ভালোবাসা থেকে থাকে, দেশের প্রতি তাদের যদি কোনো প্রেম থাকে, তাহলে তাদের আলোচনা করেই একটা পথ বের করতে হবে। কারণ, সরকার চাইলে যেকোনো সময় সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। এটা অতীতে দেশে হয়েছে।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এখন এক দফার আন্দোলন শুরু করার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। জনগণও রাস্তায় নামছেন। ইতিমধ্যে আপনারা হয়তো জেনেছেন, আমাদের নতুন করে পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। আমরা আশা করি, এর মধ্যে এক দফাতে আন্দোলন শুরু করব।’
এক দফা আন্দোলনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, এই সংসদ বিলুপ্ত করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করা—এগুলো নিয়ে আমরা একটা দাবিতে এসেছি। সেটা মূলত এই সরকারের পদত্যাগ।’
বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, ‘গতবারের চেয়ে এবারের আন্দোলনের ধরন একটু ভিন্ন হবে। আমরা হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচিতে সচেতনভাবে যাচ্ছি না। তবে সরকার যদি কোনোভাবে ওই সব দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে সে দায় সরকারের ওপর বর্তাবে। সরকার চাইলে সংবিধানে পরিবর্তন করে যেকোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে তাদের সদিচ্ছার ওপর।’
জামায়াত সম্পর্কে মন্তব্যের ব্যাখ্যা
সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক নিয়ে গত শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তাঁর দলে ও জামায়াতের ভেতরে প্রতিক্রিয়া হয়। বিষয়টাতে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া বিএনপিকে জানানো হয় বলেও জানা গেছে। তিনি বলেছিলেন, সরকার ও জামায়াতের সম্পর্ক স্পষ্ট।
এমন পটভূমিতে আজ অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, জামায়াতকে ঘিরে মন্তব্য আসলে কী ছিল? এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করছে। এ রকম অনেক দল আছে, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নেই, কিন্তু তারা তাদের মতো আন্দোলন করছে। আমরা তাদের সবাইকে স্বাগত জানিয়েছি।’
বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে জাতীয় পার্টিও যে নেই, সে প্রসঙ্গেও সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন। জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি, কোনো জোটবদ্ধ আন্দোলন করছি না। সুতরাং প্রতিটি রাজনৈতিক দলই, যারা মনে করে এই সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কথা বলা উচিত, আন্দোলন করা উচিত, তারা করতে পারে। কমিউনিস্ট পার্টি তারা নিজস্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করছে। বাসদ তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করছে। একইভাবে যারা নিজেদের মতো করে আন্দোলন করছে, তাদের সবাইকে আমরা স্বাগত জানাতে চাই।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন ও সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী।