মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন জেলায় আজ বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করা হচ্ছে। সকালে এসব এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের পর কোরবানি করেন মুসল্লিরা। এসব এলাকায় উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের পাঁচটি উপজেলার ৫০ গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এসব গ্রামের বিভিন্ন মাঠ ও মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল আটটায় হাজীগঞ্জ সাদ্রা গ্রামের সাদ্রার দরবার শরিফ মাঠে ঈদুল আজহার নামাজ পড়ান পীর মাওলানা জাকারিয়া চৌধুরী মাদানী। তিনি বলেন, ১৯২৮ সাল থেকে তাঁর পিতা সাদ্রা গ্রামের পীর মাওলানা ইসহাক বিশ্বের যেকোনো জায়গায় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এ রীতি চালু করেন। এর পর থেকেই তাঁর অনুসারীরা এটি চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুসরণ করে আসছেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, জাকনী, প্রতাবপুর, বাসারা; ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর; মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী, কচুয়াসহ শাহরাস্তি উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা আজ ঈদুল আজহা উদ্যাপন করেন।
ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৃথক দুটি পাড়ায় এবং পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ফরহাদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, তাঁর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর এলাকার পৃথক দুটি পাড়ায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কিছুসংখ্যক মুসল্লি পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন এবং পশু কোরবানি দেন। তাঁদের মধ্যে একটি অংশ পূর্ব সুলতানপুর শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরিফে মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবীর নেতৃত্বে নামাজ আদায় করেন। অন্য অংশের নেতৃত্বে ছিলেন পূর্ব সুলতানপুর রশিদিয়া দরবার শরিফের পীর মরহুম মাওলানা গোলাম কিবরিয়ার ছেলে মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ।
পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় কয়েক বছর ধরে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মীর হোসেনের নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। আজও ওই এলাকার মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ পড়ে পশু কোরবানি করেছেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সাতকানিয়ায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মির্জাখিল দরবার শরিফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাবের অনুকরণে ২০০ বছর ধরে এভাবে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল আটটার সময় আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া, তৈলারদ্বীপ, বারখাইন, খাসখামা, কাটাখালী, রায়পুর ও গুজরা গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর, চাম্বল, ডোংরা, শেখেরখীল, ছনুয়া ও পুইছড়ি এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
দরবার শরিফ সূত্র জানায়, সাতকানিয়ার মির্জাখিল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে ঈদুল আজহার প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে হজরত ইমামুল আরেফিন মৌলানা মুহাম্মদ মকছুদুর রহমান ইমামতি করেন। এ ছাড়া সাতকানিয়ার এওচিয়ার গাটিয়াডেঙ্গা, আলীনগর, মাদার্শা, খাগরিয়া, মৈশামুড়া, পুরানগড়, বাজালিয়া, মনেয়াবাদ, চরতি, সুঁইপুরা, হালুয়াঘোনা; চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর, হারালা, বাইনজুরি, চরবরমা, কেশুয়া, কানাই মাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী, জামিরজুরি; লোহাগাড়া উপজেলার পুঁটিবিলা, কলাউজান, চুনতী এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার মাহমুদাবাদ, বারৈয়াঢালা, বাঁশবাড়িয়া, সলিমপুর, মহালংকা; কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া; বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন গ্রামে পীরের অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায় করেন।
আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও মির্জাখিল দরবারের অনুসারী আবু জাফর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সকাল আটটার সময় ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছি।’ মির্জাখিল দরবার শরিফের মুখপাত্র মোহাম্মদ মছউদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছি। হানাফি মাজহাবের নিয়ম মেনে ২০০ বছর ধরে একই নিয়মে আমরা ঈদুল আজহা পালন করে আসছি। সারা দেশের শতাধিক এলাকায় দরবারের অনুসারীরাও একই সময়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ১৩টি গ্রামের মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। আজ সকাল সাড়ে আটটায় উপজেলার দক্ষিণ বলারদিয়ার আজিম উদ্দিন মাস্টারের বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে ঈদের নামাজ পড়ান ইমাম মাওলানা আজিম উদ্দিন।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দুটি গ্রামে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়ড়া নূরুল হুদা দাখিল মাদ্রাসা মসজিদে ইমাম আল আমিন ও সকাল ৮টায় জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে ইমাম আবদুর রাজ্জাক ঈদের নামাজ পড়ান। আয়ড়ায় অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে পাঁচটি গ্রামের ৪০ জন পুরুষ ও ৮ নারী মুসল্লি অংশ নেন। খয়েরবাড়-মির্জাপুরে অনুষ্ঠিত জামাতে পাঁচটি গ্রামের ৪৮ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী মুসল্লি অংশ নেন। উভয় জামাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই দুই জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন।
পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার ২২টি গ্রামে আজ পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। সকাল ৯টায় সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফ জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন প্রধান খতিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিকুল গনি। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে পশু কোরবানি দেন মুসল্লিরা।
মাওলানা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গনি বলেন, সৌদি আরবসহ বিশ্বের অন্য দেশের মুসলমানদের সঙ্গে একই দিনে তাঁরা ঈদুল ফিতর ও আজহা উদ্যাপন করছেন। প্রায় ১০০ বছর ধরে এভাবে চলে আসছে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পশু কোরবানি দেন।
বদরপুর ছাড়াও ওই দরবারের অনুসারীরা সদর উপজেলার ছোট বিঘাই, গলাচিপার সেনের হাওলা, পশুরিবুনিয়া, নিজ হাওলা ও কানকুনি পাড়া, বাউফলের মদনপুরা, শাপলাখালী, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, সাবুপুরা, ও আমিরাবাদ এবং কলাপাড়ার লালুয়া, নিশানবাড়িয়া, মরিচবুনিয়া, উত্তর লালুয়া, মাঝিবাড়ি, টিয়াখালীর ইটবাড়িয়া, পৌরশহরের নাইয়াপট্টি, বাদুরতলী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাফাখালীসহ অন্তত ২২ গ্রামে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
মাদারীপুরের ২৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ আজ ঈদুল আজহা পালন করেছেন। সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের তাল্লুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আজ সকাল সোয়া ৯টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। চরকালিকাপুর ফরাজী বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল ইদ্রিস ইমামতি করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত জান শরিফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রহ.) অনুসারীরা দেড় শ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও আজহা পালন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আজ মাদারীপুর সদর উপজেলার চরকালিকাপুর, মহিষেরচর, পূর্ব পাঁচখোলা, জাজিরা, কাতলা বাহেরচর, তাল্লুক, চরগোবিন্দপুর, পখিরা, খোয়াজপুর, দৌলতপুর, কালিকাপুর, হোসনাবাদ, রঘুরামপুর, আংগুলকাটা, হাজামবাড়ি, বাহেরচর, কেরানীরবাট, রমজানপুর, কয়ারিয়া, রামারপুল, সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, খাসেরহাটসহ জেলার ২৫টি গ্রামের মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন এবং পশু কোরবানি দেন।
শেরপুরের তিন উপজেলার চারটি গ্রামে আজ ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো সদর উপজেলার বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখারচর মধ্যপশ্চিমপাড়া ও উত্তরপাড়া, নকলার চরকৈয়া ও নালিতাবাড়ীর নন্নী পশ্চিমপাড়া। এ চার গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ নামাজের জামাতে অংশ নেন। মুসল্লিরা ফরিদপুরের সুরেশ্বর পীরের অনুসারী বলে জানা গেছে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় আজ ঈদ উদ্যাপন করেছেন কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ার নতুন জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সদর উপজেলার ফলিমারি, দুর্গাপুর, শ্যামপুর, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার দশধরী, ধর্মপাশা উত্তরপাড়া, রাধানগর, সৈয়দপুর, কান্দাপাড়া, গাছতলা, বাহুটিয়াকান্দা, মেউহারী, মহদীপুর, মগুয়ারচর, রাজনগর ও জামালপুর—১২টি গ্রামের সুরেশ্বরী দরবার শরিফের ভক্তরা আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছেন।