ঈদ উৎসবের অপেক্ষায় পুরো দেশ। আজ বাদে কাল ঈদুল আজহা। তবে ফুটবল মাঠে দেশের জন্য লড়তে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হচ্ছে না আনিসুর রহমান জিকো-শেখ মোরসালিনদের। তাতে অবশ্য কোনো আফসোস নেই; বরং সুদূর বেঙ্গালুরু থেকে দেশবাসীর ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ করার প্রত্যয় জামাল ভূঁইয়াদের। মঙ্গলবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রী কান্তেরেভা স্টেডিয়ামে ভুটানকে হারিয়ে ঈদের আগাম উৎসব করতে চান ফুটবলাররা। এই জয়টি অবসান ঘটাবে ১৪ বছরের। ২০০৯ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে সেমিফাইনালে উঠবে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। ভুটানের বিপক্ষে ‘অঘোষিত’ ফাইনালে খেলতে পারছেন না তারিক রায়হান কাজী। পায়ের চোট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে চান তারিক; কিন্তু চিকিৎসকরা না খেলানোর পক্ষে; বেঙ্গালুরু থেকে টেলিফোনে জানান জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খান।
গ্রুপ ‘বি’তে আজ প্রথম ম্যাচে বিকেল ৪টায় শক্তিশালী লেবাননের বিপক্ষে খেলবে মালদ্বীপ। সেই ম্যাচের ফলের ওপর ভিত্তি করেই জামাল ভূঁইয়ারা জানতে পারবেন, ভুটানের বিপক্ষে তাঁদের কী করতে হবে। দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পাওয়া অতিথি দল লেবানন সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে। মালদ্বীপের সমান ৩ পয়েন্ট এবং গোল পার্থক্যেও সমান বাংলাদেশ; তবে হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় টেবিলের দুই নম্বরে ক্যাবরেরার দল। তাই লেবাননের কাছে মালদ্বীপ হারলে ভুটানের কাছে কম ব্যবধানে হারলেও শেষ চারে চলে যাবে বাংলাদেশ।
ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটি ফ্লাডলাইটের আলোয়। তাই গতকাল অনুশীলনটাও শেষ বিকেলে করেছেন রাকিব হোসেন-বিশ্বনাথ ঘোষরা। তারিক কাজী খেলতে পারবেন না বলে মঙ্গলবার নতুন কৌশলে দলকে অনুশীলন করিয়েছেন ক্যাবরেরা। রাইট উইংয়ে বিশ্বনাথ কিংবা তপু বর্মণকে দেখা যেতে পারে ভুটান ম্যাচে। তারিকের পরিবর্তে একাদশ সুযোগ পেতে পারেন মেহেদী। তারিকের চোটে কিছুটা চিন্তিত বাংলাদেশ দল।
ম্যানেজার আমের খানের কথাতেও তা স্পষ্ট, ‘তারিক কাজী খেলতে চান, কিন্তু চিকিৎসকরা চাচ্ছেন না। তাঁকে নিয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না। বাংলাদেশ যদি সেমিফাইনালে ওঠে, তখন তারিক খেলতে পারবেন।’ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১৯২) চেয়ে এগিয়ে ভুটান (১৮৫)। র্যাঙ্কিংকে স্রেফ পরিসংখ্যান বানিয়ে মালদ্বীপকে মাঠের খেলায় হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভুটানের সঙ্গে সাফে কখনোই হারেনি লাল-সবুজের দলটি। তবে ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর এএফসি এশিয়ান কাপের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে ৩-১ গোলের ওই হারটি বাংলাদেশের ফুটবলকে ১৬ মাসের জন্য নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। এই সময়ে ফিফা এবং এএফসির কোনো ম্যাচ খেলতে পারেনি তারা। বেঙ্গালুরুতে সাত বছর আগের সেই দুঃসহ স্মৃতি ফিরে এলে আরেকটি স্বপ্নের মৃত্যু ঘটবে। তাই তো মুখোমুখি লড়াইয়ে ভুটানের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচের মধ্যে ১০টি জয়, একটিতে হার এবং দুটিতে ড্র করা বাংলাদেশ জয়ের সংখ্যাটা বাড়ানোর সঙ্গে সেমিফাইনালের টিকিটও নিশ্চিত করতে চায়।
বাংলাদেশের সেমির অঙ্ক
লেবাননের কাছে মালদ্বীপ হারলে, ভুটানের সঙ্গে ড্র করলেই সেমিতে চলে যাবে বাংলাদেশ। মালদ্বীপ যদি লেবাননের বিপক্ষে ড্র করে, তাহলে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশেরও একই ব্যবধানে ড্র করতে হবে। মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ উভয় ম্যাচ জিতলে সে ক্ষেত্রে লেবাননসহ তিন দলেরই পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়াবে ৬। তখন দেখা হবে গোল ব্যবধান। লেবানন +৫ গোল ব্যবধান নিয়ে আছে সুবিধাজনক অবস্থানে। মালদ্বীপ যদি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গোল ব্যবধানে জিতে, তাহলে দ্বীপরাষ্ট্র চলে যাবে সেমিতে, জামালদের বিদায় হবে। যদি মালদ্বীপ এক গোলের ব্যবধানে জিতে লেবাননের বিপক্ষে, ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ একই ব্যবধানে জিতে, তাহলে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের পয়েন্ট সমান ৪ হবে। তবে হেড টু হেডের ভিত্তিতে লেবানন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়ে সেমিতে উঠবে।