স্কুলের একাংশ চলে গেল ব্রহ্মপুত্রের পেটে

0
202
ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে চলে যাওয়া দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে

ভাঙনে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাংশ ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে চলে গেছে। প্রায় এক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছিল। এতে করে খাউড়িয়ার চরে ভাঙন দেখা দেয়।

গতকাল রোববার ও আজ সোমবার ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবল স্রোতে ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়টির পাকা ভবনের একাংশ ভেঙে নদে চলে যায়। পুরো ভবনটি যেকোনো সময় নদের পেটে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। এ জন্য বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজটি প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এটি নয়ারহাট ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিতে নয়ারহাট ইউনিয়ন ও অষ্টমীরচর ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা ভবনটি নির্মাণ শুরু করে এবং ২০২০ সালে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত বছর ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন দেখা দিলে ঝুঁকিতে থাকা ভবনটি রক্ষায় স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নামমাত্র বালুভর্তি কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে ভবনটিতে পাঠদান বন্ধ ছিল। বর্তমানে একই চরে প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী ঘর করে সেখানে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নদের ভাঙনে ভবনটি বিলীন হলেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা যেন ব্যাহত না হয় সে জন্য আমরা প্রায় দুই কিলোমিটার এগিয়ে চরে ভেতরে টিনের চালাঘরে অস্থায়ীভাবে পড়াশোনা কার্যক্রম চালাচ্ছি। চলতি শিক্ষাবর্ষে সেখানেই পাঠদান কার্যক্রম চলেছে। এখন শ্রেণি–সংকটের কারণে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমরা খুব দ্রুত স্থায়ী কাঠামো করে সেই সমস্যার সমাধান করব।’

ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ার পর ভবনটি নিলামে কেন বিক্রি করা হলো না—এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘গত বছর আমরা বিদ্যালয়ের ভবনটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলে নদে জিও ব্যাগ ফেলেছিলাম। এতে গত বছর ভাঙন থেকে ভবনটি রক্ষা পেয়েছে। এ জন্য আর নিলামে বিক্রি করা হয়নি। এ বছর হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে ভবনটি নদে বিলীন হতে থাকে।’

বিদ্যালয় ভবন ব্রহ্মপুত্র নদে চলে যাওয়ায় চরে অস্থায়ী চালাঘরে চলছে পাঠদান। সোমবার সকালে নয়ারহাট ইউনিয়নে
বিদ্যালয় ভবন ব্রহ্মপুত্র নদে চলে যাওয়ায় চরে অস্থায়ী চালাঘরে চলছে পাঠদান। সোমবার সকালে নয়ারহাট ইউনিয়নে

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. জহুরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, গত বছরও এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে সাত শ’ শিক্ষার্থী ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কারণে গত দুই বছরে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে গেছে। বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫০০ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ১২০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।

জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, এ বছর নতুন জায়গায় চালাঘর করে কোনোভাবে পাঠদান চলছে। তবে বৃষ্টি হলেই চালাঘরে পানি পড়ে। শ্রেণি–সংকটের কারণে দুই শাখার শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। শিক্ষার্থী উপস্থিতির হারও কমে যাচ্ছে।

কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত এক মাসে নয়ারহাটে একটি মসজিদসহ বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদের পেটে গেছে।

এ ছাড়া গত মাসের শেষের দিকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরভগবতীপুরে ব্যাপক ভাঙন দেখা হয়। এতে করে চরভগবতীপুরে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিক নদে বিলীন হয়।

নয়ারহাট ইউনয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ বলেন, গত বছর স্কুল অ্যান্ড কলেজটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালুভর্তি কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে এবার প্রতিষ্ঠানটি নদীতে বিলীন হয়ে গেল।

গত এক বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ইউনিয়নের চার শতাধিক পরিবার ঘর হারিয়েছে জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে আগামী মাসের মধ্যে কয়েক শ হেক্টর আবাদি জমিসহ শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চরাঞ্চলে স্থায়ী ভবন না করে, স্থানান্তর করা যায় এমন ঘর করলে সরকারের অর্থের অপচয় রোধ হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.