রাজধানীর মতিঝিলে এক দশকের বেশি সময় আগে পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন নাথকে (৪০) গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে র্যাব। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে রিপন নাথকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিপন কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। ২০১৩ সালে বাদল খুন হওয়ার পর রিপন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তিনি নিজের নাম-পরিচয় গোপন করে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আত্মগোপন করেন। সেখানে দিনে তিনি বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। আর রাতে মাদক ব্যবসা করতেন। তাঁর কাছ থেকে বেনামে নিবন্ধন করা ৯টি মুঠোফোনের সিম উদ্ধার করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়াকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে মতিঝিলে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর মরদেহ মতিঝিলের টিঅ্যান্ডটি কলোনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় ফেলে যায় খুনিরা। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালে রিপনকে মূল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৬ জুন এ মামলার বিচার শেষে রিপনসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পাঁচ আসামি হলেন রিপন নাথ ঘোষ, বিশ্বজিৎ চন্দ্র দাস, ইব্রাহিম খলিল, রতন চন্দ্র দাস ও হুমায়ূন। তাঁদের মধ্যে রিপন ও হুমায়ূন পলাতক ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গতকাল র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন রিপন।
মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে কনস্টেবল হত্যা
র্যাব জানায়, ২০১২ সালের নভেম্বরে মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রিপনের অন্যতম সহযোগী তাঁর খালাতো ভাই গোপাল চন্দ্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনার কিছুদিন পর একটি মাদকবিরোধী অভিযানে রিপন নাথ এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন। দুই মাস কারাভোগের পর রিপন জামিনে কারামুক্ত হন। তাঁর সন্দেহ ছিল, রিপন ও তাঁর খালাতো ভাই গোপাল গ্রেপ্তারের পেছনে কনস্টেবল বাদলের হাত রয়েছে। নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা করতেই রিপনের পরিকল্পনায় বাদলকে খুন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, এজিবি কলোনি এলাকায় রিপন মাদক ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি রিপন বিভিন্ন সময়ে রেন্ট-এ-কারের গাড়ি চালাতেন। কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনার পর ঘটনার এক দিন আগে রেন্ট-এ-কার থেকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া নেন। ওই গাড়িতে রিপন তাঁর চার সহযোগীকে নিয়ে কনস্টেবল বাদলের কর্মস্থল শাহবাগ এলাকায় যান। রিপনের সহযোগী বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল বাদল একই এলাকায় বসবাস করার কারণে তাঁরা পূর্বপরিচিত ছিলেন। বিশ্বজিৎ কনস্টেবল বাদলকে কৌশলে ভাড়া করা সেই গাড়িতে তোলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, রিপন ও তাঁর সহযোগীরা কনস্টেবল বাদলকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন। এ সময় বাদলের ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালান তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁরা মতিঝিল কালভার্ট-সংলগ্ন নির্জন এলাকায় এসে বাদলের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকায় এসে গাড়ি থেকে কনস্টেবল বাদলের লাশ ফেলে পালিয়ে যান।