জামাতুল আনসারের ৩ জন অস্ত্র ও ১২ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার

0
163
জামাতুল আনসারের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবসহ তিনজনকে অস্ত্র ও ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। সোমবার রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার অপর দুইজন হলো, জাকারিয়া হোসাইন ও আহাদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে সিফাত ওরফে মামিদ। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিব আরও কয়েক সদস্যসহ গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিকে যাচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে র‍্যাব-১ ও ৭ এর যৌথ দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আশপাশে থাকা তাদের কিছু সদস্য পালিয়ে যায়। অভিযানে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল ও নগদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ উগ্রবাদী লিফলেট।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত রাকিব ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থানকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়।  পাশাপাশি গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে সে সংগঠনের অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং সমতলের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত। আনসার আল ইসলাম থেকে পাওয়া প্রায় ১৫ লাখ টাকা তার কাছে জমা ছিল। সে রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকাকালে হিজামা সেন্টারের আড়ালে সাংগঠনিক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। ঢাকায় সকল শূরা কমিটির মিটিং তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত সংগঠনের শূরা সদস্য মায়মুনসহ অন্যরা দেশ-বিদেশ থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তার কাছে জমা রাখত। সে সংগঠনের অর্থায়নে মুন্সিগঞ্জে গবাদি পশুর খামার স্থাপন করেছে। তথাকথিত হিজরতকৃত অধিকাংশ সদস্য তার খামারে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করত এবং তাদের শারীরিক কসরত ও তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করা হতো।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, মোশারফ হোসেন সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অস্ত্র ও রসদ কেনাসহ সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য অর্থ সরবরাহ করত এবং শুকনা খাবারসহ পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে পার্বত্য প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠাত। এছাড়াও স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ সদস্যদের পাহাড়ে প্রেরণের সামগ্রিক কার্যক্রম সে তত্ত্বাবধান করত। সে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাজে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরে গেছে বলে জানা যায়। পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় সে সমতলের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থেকে সে সংগঠনের অন্যান্য আত্মগোপনকৃত সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সংগঠিত করার চেষ্টা করতে থাকে।

তিনি আরও জানান, মোশারফ হোসেন ইতোপূর্বে আনসার আল ইসলামের সদস্য থাকায় ওই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রাখত। সে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়। পাহাড় থেকে পলায়নের সময় তার কাছে সংগঠনের ২০ লক্ষাধিক টাকা জমা ছিল। যার মধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে ইতোমধ্যে ৭ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছে বলে জানা যায়। সে গ্রেফতারকৃত দুই সদস্যকে নিয়ে গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় অবস্থান করে সংগঠনের আত্মগোপনকৃত অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করে আমীরের নেতৃত্বে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত জাকারিয়া ২০০৮ সালে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করে ফরিদপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত। সে ২০২১ সালে সংগঠনের শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগ দেয়। তার পরিবারকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের প্রথম দিকে সে রাকিবের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি ও বাকলাইপাড়া হয়ে কেটিসিতে যায়। সে পাহাড়ে গমনের পর বিভিন্ন অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করে সমতলে আসে এবং সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে সংগঠনের আমীরের নির্দেশে রাকিবের সঙ্গে সংগঠনের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনকৃত সদস্যদের একত্রিত করার জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়।

অপর জঙ্গি আহাদুল কুমিল্লার একটি কলেজে অনার্স ৪র্থ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। সে ২০১৮ সালে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে সংগঠনের আমীর মাহমুদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে। সে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। প্রথমে সে প্রায় দুই মাস আমীর মাহমুদের বাসায় অবস্থান করে এবং আমীরের ব্যক্তিগত সহযোগী ছিল। পরবর্তীতে মাহমুদের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি হয়ে কেটিসিতে যায়। পাহাড়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা তৈরিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করে সমতলে আসে এবং সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে সংগঠনের আমীরের নির্দেশে রাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনকৃত সদস্যদের একত্রিত করার জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গলে যাচ্ছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.