রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে তিন দফা মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেজবাহুল হক ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মুক্তাদির তরঙ্গের অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে এসব ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের বিভিন্ন ব্লকে দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় একটি পক্ষ।
ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে জুমার নামাজ শেষে সালাম না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ শেষে ছাত্রলীগ নেতা মুক্তাদির তরঙ্গের অনুসারী সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের উপপরিবেশ–বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজ আনামকে দেখে সালাম দেননি ছাত্রলীগ নেতা মেজবাহুলের অনুসারী আরমান খান নামের এক কর্মী। এ ঘটনায় আরমানকে হুমকি দেন মাহফুজ। পরে এ বিষয়ে মেজবাহুল জানতে চাইলে মাহফুজ অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই ছেলে আদবকায়দা জানে না।’ এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মাহফুজকে মারধর করেন আরমান। এ ঘটনায় মেজবাহুলকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন মাহফুজ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদার বখশ হলের সামনে মাহফুজের নেতৃত্বে রিয়াজ ও বর্ণ নামের দুজন মেজবাহুলের অনুসারী রাজু নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করেন। এরপর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের মধ্যে প্রবেশ করেন। এরপর হলের সামনে অবস্থান নেন মেজবাহুলের অনুসারীরা। একপর্যায়ে রাত দুইটার দিকে দেশি অস্ত্র নিয়ে শামসুজ্জোহা হলের ভেতরে ঢোকেন ছাত্রলীগ নেতা মেসবাহুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার (ডন), উপ–ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয় ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, রাত তিনটার দিকে সমাধানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে দুই পক্ষ উপস্থিত হলে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এ সময় মাহফুজকে মারধর করেন কয়েকজন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ থামান এবং দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মুক্তাদির তরঙ্গ বলেন, মাহফুজের সঙ্গে তাঁর এক বন্ধুর ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
হলে মহড়ার বিষয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের সভাপতি চিরন্তন চন্দ বলেন, গতকাল রাত দুইটার দিকে মেজবাহুলসহ ৪০ জনের মতো নেতা-কর্মী হলে দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন বলে শুনেছেন। তিনি তখন হলের বাইরে ছিলেন বলে জানান।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেজবাহুল হক বলেন, ‘মাহফুজ একসময় আমার সঙ্গে রাজনীতি করত। তাঁকে আমার পোলাপান সালাম-কালাম দেয়নি বলে থ্রেট করেছে। পরে আমি তাঁকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করি, কী হয়েছে। সে বলে, আমার ছোট ভাই নাকি ম্যানার জানে না। পরে আমি বলি, তোর কাছ থেকে ম্যানার শিখতে হবে। বলে, হ্যাঁ শিখতে হবে। তখন আমি তাঁকে একটা গালি দিয়ে বলি, তুই কে? মাহফুজও একই কথা বলে। তারপর আমার ছোট ভাই আরমান তাঁকে মারধর করে। পরে আমি দুজনকে বুঝিয়ে থামিয়ে দিই। পরে মাহফুজ আমাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘তেমন কিছুই হয়নি। কয়েকজন নেতা–কর্মীর মধ্যে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। আমি ও সাধারণ সম্পাদক তাঁদের ডেকে মীমাংসা করে দিয়েছি।’