মহাসড়ক আইনে বলা আছে, ফসল, খড় বা অন্য কোনো পণ্য শুকানো বা এ ধরনের কোনো কাজে মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে না।
শেরপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর ধান ও খড় শুকানো হচ্ছে। চালকেরা বলেন, ব্রেক কষলে খড়ের কারণে অনেক সময় চাকা পিছলে যায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া সড়ক সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না।
মহাসড়ক আইন-২০২১ অনুযায়ী, ফসল, খড় বা অন্য কোনো পণ্য শুকানো বা এ ধরনের কোনো কাজে মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে না।
তবে কৃষকেরা বলছেন, বৃষ্টিতে খেত ও মাঠে পানি জমে গেছে। ধান ও খড় দ্রুত শুকানোর জন্য সড়ক ছাড়া তাঁদের কাছে বিকল্প আর কোনো উপায় নেই।
গত সোমবার দুপুরে দেখা যায়, শেরপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের শেরপুর-নকলা অংশে সড়কের দুই পাশে ধান ও খড় শুকানো হচ্ছে। সাপমারী, ভাতশালা, হাওড়া ও ধীমগঞ্জ এলাকায় খানিক দূর পর পর সড়কের ওপর ধান ও খড় বিছানো দেখা গেল। সড়কের পাশে ধান ও খড় শুকাতে দেওয়ায় মূল সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ অন্য যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। দুটি যানবাহন পাশ কাটাতে গেলে একটিকে থামতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের সাপমারী উত্তরপাড়া এলাকায় কৃষক মো. ইব্রাহিম সড়কের এক পাশে ধান শুকাতে দিয়েছেন। গত সোমবার সকালে তিনি ধানগুলো পা দিয়ে নেড়ে দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, তিনি প্রায় সাড়ে ৪ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। ইতিমধ্যে সব ধান কেটে ফেলেছেন। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে খেত ও মাঠে পানি জমে গেছে। ফলে উৎপন্ন ধান ও খড় তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য সড়কের ওপর নেড়ে দিয়েছেন।
হাওড়া গ্রামের কিষানি রেণুয়ারা বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ধান শুকাতে পারেননি। গতকাল সোমবার রোদ ওঠে। তাঁদের ধান শুকানোর জায়গা নেই। তাই সড়কের ওপর ধান শুকাচ্ছেন।
শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের চালক মোহাম্মদ শফিক বলেন, সড়কের ওপর ধান ও খড় শুকাতে দেওয়ায় তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। বিশেষ করে দুটি গাড়ি ‘ক্রসিং’ করার সময় সড়কের একেবারে কিনারে চলে যেতে হয়। এমনকি যাঁরা ধান শুকানোর জন্য সড়কের ওপর থাকেন, তাঁদেরও হতাহতের ঝুঁকি থাকে।
সদর উপজেলার মধ্যবয়ড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, ব্যবসার কাজে তিনি প্রায় প্রতিদিনই মোটরসাইকেলে করে শেরপুর-নকলা সড়কে যাতায়াত করেন। সামান্য বৃষ্টি হলে খড় দিয়ে ঢাকা সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কের ওপর ধান-খড় শুকানো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৯১ হাজার ৭৮১ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ লাখ ৬২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ধান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে জেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের ওপর কৃষকেরা এসব ধান ও খড় শুকাচ্ছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান সোমবার বিকেলে বলেন, সড়ক-মহাসড়কের ওপর ধান ও খড় শুকানোর বিষয়টি দুঃখজনক। সড়ক বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এটি বন্ধ করার জন্য কৃষকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাঁরা সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করার চেষ্টা করছেন।
পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, সড়ক-মহাসড়কের ওপর ধান-খড় না শুকানোর জন্য কৃষকদের অনুরোধ করা হবে।