ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে এনে তিতাসের আওতাধীন শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হবে। ভালুকা-গাজীপুরের জ্বালানি সংকটে ভোগা কারখানাগুলো এই গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। প্রথম পর্যায়ে দিনে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজি আকারে আনা হবে। পরে তা ২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা হবে। এছাড়া ভোলার বাসা-বাড়িতেও গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
এই গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব পাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো। রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্ট্রাকো ও সুন্দরবন গ্যাসের মধ্যে ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সুন্দরবনের পক্ষে কোম্পানি সচিব শাহ আলম মোল্লা এবং ইন্ট্রাকোর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ভোলায় আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আরও কূপ খনন করতে হবে। গ্যাস পরিবহনে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভোলার গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্যই এই উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ঢাকার আশেপাশের শিল্পের গ্যাস সংকট অনেকটাই দূর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম এ সময় স্থানীয় বাসা-বাড়িতে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোলা থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছি, গ্যাস নিচ্ছি। তাই ভোলার মানুষও গ্যাস পাবে।
জ্বালানি সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, ইন্ট্রাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
গ্যাসের দাম
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সিএনজি আকারে আনা ভোলার প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। এই দাম গত ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া শিল্পকারখানার দামের চেয়ে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা বেশি। শিল্পে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা। সিএনজি ফিলিং স্টেশনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম পড়ছে ৪৩ টাকা।
ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি গত বছরের ৩১ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন পেট্রোবাংলায় জমা দেয়। প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৮৬ এমএমসিএফ। ভোলার গ্যাসক্ষেত্রের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ এমএমসিএফ। ফলে উদ্বৃত্ত গ্যাসের পরিমাণ বর্তমানে ৩৪ এমএমসিএফ। ওই প্রতিবেদনে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৫১.১২ টাকা প্রস্তাব করা হয়। পরে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা চূড়ান্ত করা হয়।
প্রতি ঘনমিটার ফিড গ্যাসের মূল্য ধরা হয়েছে ১৭ টাকা, সিএনজি স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে যা ৩৫ টাকা। এই ১৭ টাকার মধ্যে বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, সুন্দরবন, আরপিজিসিএলসহ বিভিন্ন কোম্পানির মার্জিন, সঞ্চালন ও বিতরণ মাশুল গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল ও ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মার্জিন বেশি
সিএনজি স্টেশনগুলো প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে ৮ টাকা মার্জিন পায়। সেখানে প্রতি ঘনমিটার ফিড গ্যাসের মূল্য ১৭ টাকা হিসেবে ভোলার গ্যাস আনতে ইন্ট্রাকো মার্জিন পাচ্ছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার ব্যাখ্যা হচ্ছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ভোলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত গ্যাস আনতে প্রায় ২৩০-২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই মার্জিন বেশি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করলেও প্রথম পর্যায়ে ইন্ট্রাকোকে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে সরবরাহের কাজ দেওয়া হচ্ছে। একাধিক সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বাবদ ইন্ট্রাকোর কাছে এখনো তিতাস গ্যাসের শতকোটি টাকার বেশি বকেয়া পাওনা। সাম্প্রতিক সময়ে ৩০ কিস্তিতে এই বকেয়া পূরণের সুযোগ পেয়েছে কোম্পানিটি।
গত ১০ মে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে তিতাসের আওতাধীন শিল্পকারখানায় সরবরাহের বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে জ্বালানি বিভাগ। এতে গ্যাসের দাম, বিভিন্ন সংস্থার মার্জিন, গ্যাস সরবরাহকারীর জন্য পালনীয় শর্তের বিষয় উল্লেখ করা হয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, সিএনজি আকারে ভোলার গ্যাস আনার পরিকল্পনা ভালো উদ্যোগ। অনেক দেশেই এখন গ্যাস সরবরাহে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর পরিবহন সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সিএনজি আকারে গ্যাস পরিবহন খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
সোমবার ভোলার ইলিশাকে দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেবেন।