ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আটটা ছুঁই ছুঁই। লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে বাড়িতে এল আবদুস সালামের (৩৪) লাশ। শত শত মানুষের ভিড়, স্বজনদের আহাজারি। বাড়ির উঠানে বসে কাঁদছিলেন সালামের স্ত্রী জেরিন বেগম। ঘরের এক কোণে বিছানায় স্বজনেরা ধরে রেখেছেন সালামের মা আলেমা বেগমকে (৬০)। সেখানে বিলাপ করতে করতে তিনি বলছিলেন, ‘নয়ডা মাস কান্দন (কান্না) ছাড়া এক বেলা ভাতও খাবা পারুনি। মোর কলিজার টুকরাডা আর নাই। মোর কলিজাখান চিড়ে যাছে। কলিজার টুকরাডা বাড়ি আসিল, কিন্তু ওর জীবনডা নাই।’
গতকাল শনিবার রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কাহারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালামের লাশ ভারত থেকে বাড়িতে আনা হলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
সালাম মারা যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী জেরিন বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার তিন মাস পর তাঁর স্ত্রী একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।
গত বছরের ২৩ আগস্ট রাতে পঞ্চগড়ের অমরখানা সীমান্তের ওপারে ভারতের চাউলহাটি-বড়ুয়াপাড়া এলাকায় স্থানীয় লোকজনের পিটুনিতে আবদুস সালাম মারা যান বলে জানান তাঁর পরিবার ও স্বজনেরা। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে একাধিকবার পতাকা বৈঠক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এরপর দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস ধরে আইনি প্রক্রিয়ায় চিঠি চালাচালি ও যোগাযোগ করার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ লাশটি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়। ১৬ মে নিহত সালামের বড় ভাই আলিম হোসেন ও সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিন্টু কামাল ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা ভারতের জলপাইগুড়ি এলাকার একটি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা লাশটি শনাক্ত করেন। পরে শনিবার লাশটি আইনি প্রক্রিয়ায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাহিদুর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় পুলিশ অভিবাসন পথে (আইসিপি) আবদুস সালামের লাশ ফেরত আনা হয়। সেখানে বিএসএফের সহায়তায় ভারতের রাজগঞ্জ থানা-পুলিশের সদস্যরা বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বিজিবির হাতে লাশটি হস্তান্তর করে। পরে পুলিশের কাছ থেকে পরিবারের লোকজন লাশটি গ্রহণ করেন। এ সময় বিজিবি, বিএসএফ সদস্যরা ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।