সিটি নির্বাচনের আগে হঠাৎ পুলিশের ‘ধরপাকড়’, সিলেট বিএনপিতে আতঙ্ক

0
111
বিএনপি

হঠাৎই সিলেটে একের পর এক বিএনপি ও তার সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। গত চার দিনে মহানগরের অন্তত ১৭ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তল্লাশির নামে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ এ ‘ধরপাকড়’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ অবস্থায় বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবার সিলেটে মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি হবেন না, তা স্পষ্ট করতে ২০ মে নগরে জনসভা ডেকেছেন। গত সোমবার আরিফুলের জনসভা ডাকার পর থেকেই মূলত চাপে পড়েছে বিএনপি। বেছে বেছে আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এরপরও সিটি নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে নতুন করে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, আরিফুল ঘোষণা দিয়েছেন, ২০ মে সভা করে তিনি সিটি নির্বাচন নিয়ে নিজের মতামত জানাবেন। মূলত তাঁর জনসভায় যেন মানুষ না হয়, সে জন্য পুলিশ আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

তবে বিএনপির অভিযোগের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস। তিনি বলেন, পুরোনো মামলার পরোয়ানাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে। এটা পুলিশের রুটিনওয়ার্ক (নিয়মিত কাজ)। আর সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশ সদস্যদের মারপিট করার অভিযোগে গত মঙ্গলবার আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করছে না। বিএনপির অভিযোগ সত্য নয়।

সিলেটে ছাত্রদলের মিছিল থেকে আটজন আটক

২৩ মে সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। আওয়ামী লীগ এ সিটিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের একটি মিছিল থেকে ছাত্রদল ও যুবদলের আট নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তাঁদেরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করার অভিযোগ এনে পুলিশ ওই রাতেই কোতোয়ালি থানায় মামলা করে। পরে এ মামলায় আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা অভিযোগ করেছেন, গত চার দিনে ছাত্রদল ও যুবদলের আটজন ছাড়াও বিএনপির আরও অন্তত ৯ নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। পরে বিভিন্ন পুরোনো মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার থেকে প্রতি রাতেই বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। তাই ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন।

প্রার্থী হবেন কি না তিন সপ্তাহ পর জনসভা করে জানাবেন মেয়র আরিফুল

এদিকে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে মহানগর বিএনপি। এতে বলা হয়, গত বুধবার দিবাগত রাতে মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক শামীম মজুমদার, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ লাহিন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বদরুল ইসলাম, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অলিবুর রহমান আলী, ছাত্রদল নেতা ইমন ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা হাবিবকে পুলিশ ‘অন্যায়ভাবে’ গ্রেপ্তার করেছে।

বিবৃতিতে মহানগর বিএনপি অভিযোগ করেছে, গত বুধবার দিবাগত রাতে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লোকমানুজ্জামান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আহমদসহ দলীয় অনেক নেতা-কর্মীর বাসাবাড়িতে পুলিশি তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের আটকের পর বিষয়টি পুলিশ অস্বীকার করে কয়েক ঘণ্টা পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে। এতে আটক নেতা-কর্মীদের পরিবারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে প্রতিহত করতেই পুলিশ হঠাৎ ধরপাকড় শুরু করেছে এবং নতুন করে মামলা দিচ্ছে। বিএনপি সিটি নির্বাচনে যাবে না, এরপরও মেয়র পদে নিজেদের প্রার্থীর জয় শতভাগ সুনিশ্চিত করতেই সরকারের নির্দেশে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি চালাচ্ছে।

এদিকে ‘গণগ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানি’ বন্ধের দাবি জানিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। তিনি বিবৃতিতে বলেন, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার ও বাসাবাড়িতে তল্লাশির নামে পুলিশি হয়রানি চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। অথচ বিএনপি বারবার ঘোষণা দিয়েছে, এ সরকারের অধীন সিটি নির্বাচনসহ প্রহসনের কোনো নির্বাচনেই বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মী অংশ নেবেন না।

অবিলম্বে গ্রেপ্তার-নির্যাতন বন্ধ না হলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন খন্দকার মুক্তাদির। বিবৃতিতে তিনি দলের গ্রেপ্তার অন্য নেতাদের পাশাপাশি নগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুস সবুর এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবদলের সদস্য সায়েফ আহমদও গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

সিলেটে কুশল বিনিময়ের নামে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার

সিলেট বিএনপির আরিফুল হকপন্থী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আরিফুল মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেতে পারেন বলে নগরে চাউর রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করার জন্য আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার এ প্রক্রিয়ারই অংশ। শেষ পর্যন্ত আরিফুল প্রার্থী হলে যেন বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা তাঁর পক্ষে কোনো কাজে অংশ নিতে না পারে, সে জন্যই ভয়ভীতি দেখানো চলছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ বাড়াতেই নতুন করে ‘গায়েবি’ মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বেছে বেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। এ চাপ ক্রমশ বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.