এবারও চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার শঙ্কা

0
106
আবর্জনায় ভর্তি চট্টগ্রামের চাক্তাই খাল। শুক্রবার নগরীর তক্তারপুল এলাকা থেকে তোলা

চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সড়ক। সড়কটির পাশে বয়ে গেছে শীতল ঝরনা খাল। আবর্জনা জমে খালটি এখন ভরাট। গজিয়ে উঠেছে ঘাসও। তার ওপর খেলা করছে শিশুরা। খালটি থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের কখনও আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখেননি স্থানীয়রা। শুধু এই খালটি নয়, সম্প্রতি নগরের ২১টি খাল ও নালা সরেজমিন ঘুরে আবর্জনায় ভর্তি দেখা গেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যাচ্ছে। এবারের বর্ষায়ও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্বয়ং জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে জড়িত থাকা কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, খাল-নালায় জমে থাকা বর্জ্যের কারণে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল মিলছে না। অন্যদিকে, খাল-নালা থেকে আবর্জনা পরিষ্কারে নির্বিকার সিটি করপোরেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা বন্ধ এবং নির্ধারিত সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে নগরের বাসিন্দাদের বর্জ্য ফেলা নিশ্চিত করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে সিটি করপোরেশনের। নয় তো এবারও জলাবদ্ধতার কষ্ট ঘুচানো যাবে না। চট্টগ্রামে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে চারটি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।

সরেজমিন ঘুরে নগরের ২১টি স্পটে খাল-নালায় ময়লার স্তূপ পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– চাক্তাই খালের শাখা খাল বাকলিয়া-বউবাজার এলাকা, বউবাজার ডাইল বাড়ি, চাক্তাই খালের তক্তারপুল, বাকলিয়া এক কিলোমিটার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার সংলগ্ন মির্জা খালের শাখা খাল, আতুরার ডিপো এলাকার নালা, হোটেল লর্ডসইন সংলগ্ন কালভার্ট, ২ নম্বর গেট কবরস্থান সংলগ্ন খাল, চকবাজার হিজড়া খাল, চকবাজার ধুনিরপুল, ফুলতলা ব্রিজ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে নাসির খালের কালভার্ট, ঠাণ্ডামিয়ার ব্রিজ সংলগ্ন খাল, রঙ্গিপাড়া কন্ট্রোল মোড় এলাকার খাল, ঈদগাহ মুন্সিপাড়া ব্রিজ, রূপসা বেকারি সংলগ্ন আজবাহার খাল, সদরঘাটের পিকে সেন লেন নালা ও কলাবাগিচা খাল। এসব খালের কোথাও আবর্জনা জমে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। কোনোটিতে আবর্জনার ওপর ঘাস জমেছে।

এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের ৩০টি ডাস্টবিন থেকে ১৭টি খালে আবর্জনা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তাঁরা একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে চাক্তাই খাল, চাক্তাই শাখা খাল, বাকলিয়া খাল, রাজাখালী খাল-৩, শীতল ঝরনা খাল, মহেশখাল, মহেশখালী খাল, টেকপাড়া খাল, বদরখালী খাল, সদরঘাট খাল-১ ও ২, বামনশাহী খাল, চশমা খাল, গয়নাছড়া খাল-২, খন্দকিয়া খাল, আজববাহার খাল ও নয়ারহাট খাল। এসব খালে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন থেকে সরাসরি আবর্জনা যায়।

এ ছাড়া বাকলিয়া খালের রাহাত্তারপুল, মহেশখালী খালের ফইল্যাতলী ব্রিজের পাশে, চাক্তাই খালের মাস্টারপুল, বাড়ইপাড়া ব্রিজ, ফুলতলা, ধুনিরপুল, মিয়াখান নগর, বদরখালী খালের সিটি করপোরেশন কলেজ এলাকা, বামনশাহী খালের কাজীপাড়া, শীতল ঝরনা খালের আতুরার ডিপো ও আশেকানে ডিগ্রি কলেজের পেছনে সদরঘাট খাল-১ এর পি কে সেন সাততলা এলাকা ও চশমা খালের ২ নম্বর গেট এলাকায় খালে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন থেকে সরাসরি ময়লা পড়ছে। ডাস্টবিন থাকায় অনেক এলাকায় সরাসরি খালে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে অনেক এলাকায়।

বাঁধকে দায়ী করছেন মেয়র, সিডিএর তীর চসিকের দিকে সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে নালার দৈর্ঘ্য ৯৭২ কিলোমিটার। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দাবি, নগরে নালার পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এরই মধ্যে নির্মিত মাত্র ৫৪ কিলোমিটার নালা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব তাদের। বাকিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চসিকের। এসব নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় বৃষ্টি হলে পানি আটকে থাকছে।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজের জন্য খালে যেসব বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বৃষ্টির আগে অপসারণ করতে হবে। নয়তো জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তা ছাড়া ৩ ফুটের বেশি প্রশস্ত নালা ও খাল পরিষ্কার এবং পানি চলাচলের প্রবাহ রক্ষার দায়িত্ব সিডিএর।

তবে সিডিএর চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমরা কাউকে দোষারোপ করছি না। তবে সিটি করপোরেশন বলেছিল, খালে বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। আমরা বাঁধ সরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু বাঁধ সরিয়ে নিলে তো হবে না, পানি তো ড্রেন দিয়ে খালে আসতে হবে। ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করলে সেখানে যদি ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে, তাহলে পানি খালে যাবে কীভাবে?

আইনের কঠোর প্রয়োগ চান বিশেষজ্ঞরা

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়। ন্যূনতম যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাতেও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত না করার কারণে শৃঙ্খলা আনা যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নগরবাসীর বর্জ্য ফেলা নিশ্চিত করতে হবে। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা বন্ধে জরিমানা ও কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে। নয়তো জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু হবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.