বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্কের ‘উন্নতি’ ঘটাতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে চীন। ইরান ও সৌদি আরবের আদলে প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চায় বেইজিং।
গত মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা ও নেপিদোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সর্বশেষ এ প্রচেষ্টা বৈশ্বিক সংঘাতে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করার আরেকটি প্রয়াস। ভারতের দুই প্রতিবেশী অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায় বেইজিং। এর আগে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বৈরিতার অবসান ঘুচিয়ে চমক দেখিয়েছে চীন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যেও শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং।
দুই বছর আগে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করা সর্বোচ্চ পদস্থ চীনা কর্মকর্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং। আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে চীন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং সামরিক দখলের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন নেপিদোতে দেশটির সামরিক নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে বলেছেন, বেইজিং চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক ‘প্রসারিত’ করতে প্রস্তুত।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন জেনারেল হ্লাইংকে বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নকে বেইজিং সমর্থন করে। চীন সংশ্লিষ্ট সমস্যার আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়। এ জন্য চীন দুই দেশের সঙ্গে বাস্তবোচিত সহযোগিতার জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে চীন শরণার্থী সংকট সমাধানে উভয় দেশের সঙ্গে কাজ করেছে। নিপীড়ন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে এসে আশ্রয় নিলে নেপিদো ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিও সামরিক জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সাম্প্রতিক আলোচনায় ভারতও যুক্ত। বেইজিং অবশ্য মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে তার অর্থনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন তাঁর সফরে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সুয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ সময় থান সোয়ে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক করিডোরকে উন্নীত করতে দুই দেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত নেপিদো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে চীন কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের বিশেষ দূত দেং সি জুন মিয়ানমার সফর করেন। গত মাসের শুরুতে তিনি ঢাকা সফর করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন।
চীনের দূতিয়ালির কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের প্রায় ছয় বছরের মাথায় মিয়ানমার প্রথমবারের মতো এই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি দলকে রাখাইনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। রাখাইন পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য কতটা অনুকূল, তা দেখতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের আজ শুক্রবার রাখাইনের মংডুতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল কুনমিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আজ রাখাইনে যাবেন। ওই সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবে। সব ঠিকঠাক এগোলে চলতি মাসে ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গার প্রথম দলটি নিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় চীন ও মিয়ানমার।