মাথায় উকুন হওয়া আমাদের দেশে পরিচিত ও বিব্রতকর সমস্যা। এই পরজীবী সাধারণত মানবদেহের তিনটি জায়গায় সংক্রমণ করে, যার মধ্যে মাথায় বা মাথার চুলে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটায়। এ ছাড়া শরীরে এবং পিউবিক হেয়ার বা গুপ্তলোমেও হওয়া বিচিত্র নয়। আবার পুরুষের তুলনায় নারীদের চুলে উকুনের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। যার মধ্যে কিশোরীদের মাথায় বেশি উকুন হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ১২ বছর বয়সে উকুন বেশি দেখা যায়।
উকুন উড়তে বা লাফ দিতে পারে না। সাধারণত একজনের মাথা, শরীর থেকে সরাসরি অন্যজনের মাথা, শরীরে চলে যেতে পারে। আবার একজনের ব্যবহৃত চিরুনি, ব্রাশ, বালিশ, চুলের ফিতা, রাবার ব্যান্ড, বিছানার চাদর, গামছা, তোয়ালে ইত্যাদির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন
খালি চোখেই উকুন দেখা যায়। চুলের গোড়ায়, চুলে বাচ্চা উকুন, প্রাপ্তবয়স্ক উকুন ও উকুনের ডিম (যা দেখতে সাদাটে) দেখা যায়। ডিমগুলো সাধারণত চুলের গায়ে লেগে থাকে।
অনেক সময় কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে দীর্ঘদিন উকুনের সংক্রমণে চুলকানি, ছোট ছোট দানা, গোটা, চামড়া লাল হয়ে যাওয়া, ব্যথা হওয়া, কস পরা; এমনকি জ্বর, খিটখিটে স্বভাব, মাথার, কানের পেছনের দিকে চাকা বা লিম্ফনোড বড় হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উকুন যেহেতু মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে, তাই বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন সংক্রমণের কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে।
এ ছাড়া মাথার ত্বকে সংক্রমণ বা পায়োডারমা অব স্ক্যাল্প হতে পারে।
চিকিৎসা
প্রাচীনকালে উকুনের চিকিৎসার জন্য মাথা ন্যাড়া করাই ছিল প্রধান কৌশল। এখনো আমাদের দেশে এই প্রচলন থেকে গেছে। তা ছাড়া চুল খুব ছোট করা ভালো, যেখানে মাথার সব জায়গায় সমমাপের চুল থাকবে।
উকুনের চিকিৎসায় বিভিন্ন রকমের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। গর্ভবতী নারী এবং যাঁরা শিশুকে বুকের দুধ পান করান এবং ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধ দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
ঘরোয়া চিকিৎসা
উকুন দূর করার ক্ষেত্রে অনেক সময় পেট্রোলিয়াম জেলি, মেয়োনিজ, টি ট্রি অয়েল, রসুন, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বাড়িতে ব্যবহার করা যায়। তবে এতে সব সময় ভালো ফল না–ও পেতে পারেন।
প্রতিরোধ
- নিয়মিত চিরুনি দিয়ে মাথা ভালোভাবে আঁচড়ানো। প্রতিবার আঁচড়ানোর আগে মাথা ভালোভাবে তেল বা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে।
- কাপড়চোপড়, বালিশ, তোয়ালে, বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। সম্ভব হলে ইস্তিরি করতে হবে। যেসব কাপড় ধোয়া যাবে না (নন–ওয়াশেবল), তা ড্রাইওয়াশ করা বা প্লাস্টিকের ব্যাগে সিল করে শুষ্ক জায়গায় দুই সপ্তাহের জন্য রেখে দিতে হবে।
- ব্যবহার করা চিরুনি, ব্রাশ গরম পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- অবশ্যই উকুন নির্মূলের জন্য পরিবারের সবাইকে (একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হলে) একসঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে।