‘আমাগো আর কতজনরে খুন করবে ওরা’

0
113
মনির চৌকিদারের এমন মৃত্যুতে স্বজনেরা এখন দিশেহারা। আজ সকালে উপজেলার চরদৌলতখান ইউনিয়নের মিয়ারহাট লঞ্চঘাট এলাকায়

হাতবোমা হামলায় গতকাল সোমবার রাতে স্বামীকে হারিয়েছেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রেশমা বেগম। স্বামীর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি দিশাহারা। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরে দ্যাখতাছি একের পর এক খুন। একে একে আমাগো গোষ্ঠীর ৯ জন লোককে মাইরা ফালানো হইছে। একটারও বিচার পাই নাই। এখন ওরা আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইলো। আমাগো আর কতজনরে খুন করবে ওরা? ওদের কী বিচার হইব না?’

কালকিনিতে প্রতিপক্ষের হাতবোমা হামলায় প্রাণ গেল মুদিদোকানির

গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে কালকিনি উপজেলার চরদৌলতখান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়ারহাট লঞ্চঘাট এলাকায় প্রতিপক্ষের হাতবোমা হামলায় নিহত হন মনির চৌকিদার (৩৫)। এ ঘটনায় ‘হাতবোমা হামলায় প্রাণ গেল মুদিদোকানির’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। মনির চৌকিদার উপজেলার মিয়ারহাট লঞ্চঘাট এলাকার রশিদ চৌকিদারের ছেলে। আজ সকালে মনিরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরদৌলতখান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া শিকদারের সঙ্গে ওই ইউপির পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন মিয়ার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর আগেও ইউপি নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত মনির চৌকিদারের পরিবারের লোকজনের দাবি, এসব দ্বন্দ্বের জেরে এর আগেও মনির চৌকিদারের পরিবারের লোকজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল রাতে ইউপি চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া শিকদারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে।

মনিরের মেয়ে স্কুলছাত্রী আফরোজা আক্তার বাবার হত্যার বিচার দাবি করে বলে, ‘চাঁন মিয়া শিকদারের লোকজন আব্বুরে মারতে চায়। এ কারণে আমার আব্বু এক বছর ধরে পলাইয়া ছিল। রাইতে বাজারে আসছিলাম সিম তুলতে, ঘরে যাইয়া শুনি আমার আব্বু বোমার আঘাতে মারা গেছে। যারা আমার আব্বুরে মারছে তাদের যেন ফাঁসি হয়। এটার যেন বিচার হয়।’

বোমা হামলায় নিহত মনির চৌকিদারের বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশিরা ভিড় করছেন

বোমা হামলায় নিহত মনির চৌকিদারের বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশিরা ভিড় করছেন 

মনিরের ছোট ভাই সাব্বির চৌকিদার বলেন, ‘আমার ভাই মিলন প্যাদার রাজনীতি করতো। নির্বাচনে হারার পর আমাদের লোকজনকে যেখানে পায়, সেখানেই হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। গত এক মাস আগেও মিজান নামে আমাদের একজনকে বোম মেরে পা উড়িয়ে দিয়েছে। সে এখন পঙ্গুতে চিকিৎসা নিচ্ছে। আমার ভাইও ওদের হামলার শিকার। গতকাল রাতে চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া শিকদার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই হামলার নেতৃত্ব দেন। তাঁর কথা মতো ফারুক ব্যাপারী, জামাল সরদার, গিয়ারউদ্দিন শরীফ, জব্বার ব্যাপারীসহ ছয় থেকে সাতজন মিলে আমার ভাইকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। ওরা আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’

তবে ইউপি চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া শিকদার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এলাকায় কিছু হলেই আমার নাম আর আমার লোকদের কথা বলা হয়। গতকাল রাতের ঘটনা আমি কিছুই জানি না। আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। পুলিশ এই ঘটনার আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করুক। এটা আমরাও চাই।’

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলাও হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, হামলার পরপরই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের আটক করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন আজ সকালে বলেন, ‘এলাকায় রাত থেকে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছে। সংঘর্ষ এড়াতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। তাঁরা এজাহার দিলেই মামলা নেওয়া হবে।’

এ ধরনের বিস্ফোরকের উৎস জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘বিস্ফোরকের কাঁচামাল আশপাশের জেলা এবং ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে চরদৌলতখান ইউনিয়নে বসে হাতবোমা তৈরি করা হয়। এসব তৈরির জন্য কিছু অভিজ্ঞ ব্যক্তিও আছেন। তাঁদের ধরতে আমরা ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছি। এর আগেও ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমরা বিস্ফোরক সরঞ্জামসহ বেশ কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করেছি।’

নিহত মনিরের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় মনির চৌকিদার এশার নামাজ আদায় করতে স্থানীয় একটি মসজিদে যান। নামাজ শেষ করে দোকানে ফেরার পথে মনিরকে লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে মনির চৌকিদারের মৃত্যু হয়। হাতবোমা বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকে। পরে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.