প্রায় ১৫ বছর পর বিভিন্ন মানের ২৫ কেজি ৩১২ গ্রাম স্বর্ণ বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত নভেম্বরে ডাকা নিলামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও উপযুক্ত দরদাতা মেলেনি। অনেকটা বাধ্য হয়ে আগের নিলাম বাতিল করে পুনরায় ওই স্বর্ণ বিক্রির নিলাম ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবারও শুধু স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এতে অংশ নিতে পারবেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চোরাই পথে স্বর্ণ আনার সময় আটক স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। এ পর্যন্ত শুল্ক গোয়েন্দাদের হাতে আটক স্বর্ণের পরিমাণ সাড়ে ৬ হাজার কেজির মতো। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ করেছে ২ হাজার ৪২৯ কেজি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে স্থায়ী খাতে জমা আছে ৯৬ কেজি ৪৩০ গ্রাম। এর মধ্যে স্বর্ণবার ৫৭ কেজি ১৫৯ গ্রাম এবং বাকি ৩৯ কেজি ২৭১ গ্রাম স্বর্ণালংকার বা মিশ্রিত স্বর্ণ। আর অস্থায়ী খাতে (মামলা চলমান) আছে ২ হাজার ৯০০ কেজির মতো। এ ছাড়া আইনি প্রক্রিয়া শেষে মালিককে ফেরত বা নিলামে বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ৮৭ কেজি ৪০০ গ্রাম। এর মধ্যে স্বর্ণবার ছিল ৬৫৪ কেজি। বাকি ৪৩৩ কেজি ৪০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার।
জানা গেছে, স্থায়ী খাত থেকেই ২৫ কেজি ৩১২ গ্রাম বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয় গত নভেম্বর মাসে। ওই মাসের শুরুতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৪ থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে ২ হাজার টাকায় দরপত্র কিনে জমা দিতে বলা হয়। এরপর প্রাথমিকভাবে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে স্বর্ণ যাচাইয়ের জন্য একজন স্বর্ণকার নিয়ে ভল্টে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। এর তিন দিন পর দরপত্র জমা নেওয়া হয়। ওই দিনই তা উন্মুক্ত করে এ সংক্রান্ত কমিটি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও প্রতিটি প্রায় একই রকম দর দিয়েছে। প্রকৃত বাজারদরের তুলনায় যা অনেক কম। যে কারণে বিক্রি না করে আবার নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা হয়তো মনে করেন, সবাই একই রকম দর দিলে বাজারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপায় থাকবে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি ন্যূনতম দর থাকে। যার নিচে গেলে বিক্রির সুযোগ নেই। শুধু এ কারণে বছরের পর বছর নিলাম বন্ধ আছে। তিনি জানান, আটকের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে কেবল স্থায়ী খাতে জমা স্বর্ণবারের মধ্যে আন্তর্জাতিক হলোগ্রাম যুক্ত বার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে নেওয়া হয়। স্থানীয় উৎস থেকে কেনা এ স্বর্ণবার জমা থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। এর বাইরে রিজার্ভের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বর্ণে বিনিয়োগ আছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই নিলামের মাধ্যমে ২১ কেজি ৮২২ গ্রাম স্বর্ণ বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরের শুরুর দিকে তিন ধাপে আরও ২৫, ২১ ও ২০ কেজি বিক্রি করা হয়। উপযুক্ত দরদাতা না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন পর গত নভেম্বরে নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
যে কোনো স্বর্ণ আটকের পর শুল্ক গোয়েন্দারা প্রথমে মামলা করেন। এরপর সিলগালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে অস্থায়ী খাতে জমা রাখা হয়। মামলা নিষ্পত্তির পর আদালতের নির্দেশে কখনও রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হয়, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী খাতে জমা হয়; কখনও মালিক ফেরত পান। তবে আটক স্বর্ণ ফেরত নিতে নির্ধারিত শুল্ক এবং যে হারে জরিমানা গুনতে হয়, তাতে ফেরত নেওয়ায় আগ্রহী হন খুব কম ব্যবসায়ী। অনেক সময় প্রকৃত মালিককে সামনে হাজিরের বিষয় থাকে। যে কারণে আইনি লড়াইয়ের ঘটনা কম ঘটে। ফলে আটক স্বর্ণের বেশিরভাগই সরকার পেয়ে যায়।