মুরগির উত্তাপে তেতেছে ডিমের বাজার

0
160
প্রতীকী ছবি

মুরগির দাম হু হু করে চড়ায় মানুষ ডিম কিনে সান্ত্বনা খুঁজতে থাকেন। তাতেই হিতে বিপরীত হয়েছে। এবার মুরগির উত্তাপে ডিমের দামও সাধারণের নাগালের বাইরে। ব্রয়লার মুরগি ও ডিম কিনতে ত্রাহি দশা ক্রেতার। এক মাসের কম সময়ে আমিষ জাতীয় খাদ্যপণ্য দুটির মধ্যে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ৮৫ থেকে ৯০ এবং ফার্মের প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

ভোক্তাদের অভিযোগ, অল্প কয়েক দিনে বাজার অস্থির হলেও সরকার গা করছে না। খরচ কমাতে অনেকেই ব্রয়লারের পর এখন ডিম কেনাও কমিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মুরগির দোকানে কথা হয় আব্দুল হালিমের সঙ্গে। কাঁঠালবাগানের এ বাসিন্দা ১ কেজি ৮০০ গ্রামের একটি ব্রয়লার কেনার পর সমকালকে বলেন, এই যে হু হু করে দাম বেড়ে গেল; বাজারে সরকারের কোনো তদারকি দেখেন? আমাদের এসব কথা কেউ শুনবে না। বলেও লাভ নেই। আমাদের মতো কম আয়ের মানুষের কেনায় কাটছাঁট ছাড়া উপায় নেই।

রাজধানীর মালিবাগ, কারওয়ান বাজার ও নাখালপাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায়। বড় বাজারগুলোতে ২৩৫ টাকায় কেনা গেলেও পাড়া-মহল্লায় তা ২৪০ টাকা। অথচ এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি। সোনালি জাতের মুরগির কেজিতে গত এক মাসে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এক মাস আগে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ৩০০ থেকে ৩২০। একইভাবে দেশি মুরগির দামও ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়।

দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কারওয়ান বাজারে ‘নরসিংদী ব্রয়লার হাউস’-এর বিক্রয়কর্মী আবুল কালাম বলেন, কাপ্তানবাজারে (পাইকারি বাজার) প্রতিদিন বাড়ছে মুরগির দাম। হাঁস-মুরগির খাদ্যের দামও গত তিন-চার মাসে দ্বিগুণ হয়েছে। এ কারণে খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়লে ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। ক্রেতারা কম কিনে থাকেন।

ব্রয়লারের দাম বাড়ার কারণে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ডিমে ঝুঁকেছেন ভোক্তারা। এতেই তেতে ওঠে ডিমের বাজার। বড় বাজারগুলোতে খুচরা ব্যবসায়ীরা এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১৪০ টাকা দরে। তবে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। মাসখানেক আগে ডিমের ডজন কেনা গেছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে প্রায় প্রায় ৪৭ শতাংশ। আর ডিমের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, মুরগির খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। খামারির সংখ্যা কমে গেছে। এতে ডিমের উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে রমজানে ডিমের চাহিদা কম থাকে। কয়েক দিনের মধ্যেই ডিমের বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

দাম বাড়ার জন্য খামারিরা দায়ী করছেন মুরগি উৎপাদনকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক খামারিরা বাজারে প্রতিযোগিতায় না থাকায় ডিম ও মুরগির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদন খরচ ও লাভ হিসাব করলে এক কেজি ব্রয়লারের দাম থাকার কথা সর্বোচ্চ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। অস্থির হয়ে ওঠা ডিম-মুরগির বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনতে খাদ্যের দাম কমানোসহ সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.