দাবি, দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাবের পর এবার ঘোষণাপত্র আসছে

0
144
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের (জেএসডি, নাগরিক ঐক্যে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণ অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) নেতারা। গত ১৫ নভেম্বর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে

যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি দাবি দিয়েছে ১০ দফা এবং রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কারের ব্যাপারে ২৭ দফা প্রস্তাব করেছে দলটি। আর গণতন্ত্র মঞ্চ দাবি দফা এবং সংস্কারের রাজনৈতিক কর্মসূচি মিলিয়ে দিয়েছে ১৪ দফা। যদিও তাদের মধ্যে মূল ইস্যুতে অর্থাৎ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কোনো মতপার্থক্য নেই। কিন্তু এর বাইরে বিএনপি এবং মঞ্চ তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক আদর্শ এবং দল বা জোটের চিন্তা থেকে কিছু দাবি ও সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। এখন তাঁরা প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে ঘোষণাপত্র তৈরি করার কথা বলছেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে ঘোষণাপত্র দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে, আন্দোলনের ১০ দফা দিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ ১৪ দফা দিয়েছে। বেশ কিছু দফা প্রায় একই। কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে একটা যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করছি। বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব ও সরকার পতনের ১০ দফা এবং গণতন্ত্র মঞ্চের দফাগুলোর সমন্বয়েই এটি করা হবে

ইকবাল হাসান মাহমুদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
সবগুলো মিলিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট দফা দাঁড় করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্দোলন সফল হওয়ার পর তৈরি হওয়া সরকারের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার বা মেরামতের রাজনৈতিক কর্মসূচিও এ ঘোষণাপত্র থাকবে।

গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সব দল ও জোট যুগপৎ কর্মসূচি পালন শুরু করে। প্রথম কর্মসূচির আগেই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি চূড়ান্ত করতে চেয়েছিল গণতন্ত্র মঞ্চ। গত এক মাসে গণমিছিল, গণ অবস্থান, সমাবেশসহ চারটি যুগপৎ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিরোধীরা। সে কারণে ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শেষ করা যায়নি বলে মঞ্চের নেতারা বলছেন। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এখন আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। আন্দোলনের এ পর্যায়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে চায় গণতন্ত্র মঞ্চ।

সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মূল দাবির বাইরে বিএনপির বাকি দাবিগুলো মানবাধিকার, সুশাসন, আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত এবং তাদের দলীয় নেতা–কর্মীদের মুক্তির বিষয় নিয়ে।

বিএনপি ১০ দফা ঘোষণার দুদিন পরেই যুগপৎ আন্দোলন, সরকার ও শাসনব্যবস্থার বদলে ১৪ দফা ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। গত ১২ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দফা তুলে ধরেন গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। মঞ্চের ১৪ দফায় রয়েছে—সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, সংবিধানের ৭০তম অনুচ্ছেদের সংশোধন করে সরকার গঠনে আস্থা ভোট ও বাজেট পাস ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রাখাসহ বেশ কিছু দাবি।

গণতন্ত্র মঞ্চের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ অন্তর্বর্তীকালীন সংস্কারের বেশ কিছু দাবিতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ একমত। সংবিধানের ৭০তম অনুচ্ছেদের সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি, সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মতো কিছু বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যৌথ ঘোষণাপত্রের বিষয়ে বোঝাপড়ায় আসা যাবে।

বিএনপি গত ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখার ২৭ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করে। সেখানে তারা সংবিধান সংস্কার কমিশন, জাতীয় সমঝোতা কমিশন, জুডিশিয়াল কমিশন, প্রশাসনিক কমিশন, মিডিয়া কমিশন, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন করবে বলে ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখার বেশ কিছু বিষয় গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাতেও রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্রে এ বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আন্দোলনরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয় করতে সাত সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। গত ২৮ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। আগামী সপ্তাহে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে একটা যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করছি। বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব ও সরকার পতনের ১০ দফা এবং গণতন্ত্র মঞ্চের দফাগুলোর সমন্বয়েই এটি করা হবে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।’

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেছেন, আন্দোলনের লক্ষ্য এবং আন্দোলন সফল হলে রাজনৈতিক কর্মসূচি কী হবে, এসব বিষয় ঘোষণাপত্রে থাকবে। ফলে ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে আন্দোলন আরও গতি পাবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সামছুর রহমান

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.