হিজাব আইন লঙ্ঘন করায় নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের ১০০ দিন পার হলো। গত ১৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনার পর দেশটিতে চলমান বিক্ষোভ ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ; যা দেশটির সরকারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাঁরা দাবি আদায়ে অনড়। কোনোভাবেই পিছু হটবেন না। এ বিক্ষোভের মূল স্লোগান- নারী, জীবন, স্বাধীনতা।
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি বলছে, চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৬৯ শিশুসহ ৫০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পথে। এই বিচারকে লজ্জাজনক ট্রায়াল বলে অভিহিত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চলমান এই বিক্ষোভে সাধারণ মানুষসহ সুপরিচিত অনেককেই গ্রেপ্তার কিংবা দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিখ্যাত ইরানি অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ তিনি তরুণ এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। এর আগে তিনি হিজাব ছিঁড়ে নিজের একটি ছবিও প্রকাশ করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
তাঁর সহকর্মী ও অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘দ্য সেলসম্যান’র পরিচালক আসগর ফারহাদি বলেছেন, ‘যদি এ ধরনের সমর্থন দেখানো অপরাধ হয়, তাহলে দেশের কোটি কোটি মানুষ অপরাধী।’
বেসরকারি সংস্থা কুর্দিস্তান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক বলেছে, কুর্দি-ইরানি র্যাপার সামান ইয়াসিনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অধিকার গোষ্ঠীটি এর আগে বলেছিল, ইয়াসিনকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। ইরানের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার তাঁর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল বহাল রেখেছেন। সেই সঙ্গে পুনরায় বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিবিসি ফার্সিতে প্রচারিত একটি অডিওতে বডিবিল্ডার সাহান্দ নূর মোহাম্মাদ জাদেহ অভিযোগ করেছেন, তাঁকে কারাগারে প্রহসনমূলক দণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর তেহরানে বিক্ষোভের সময় রেলিং ভেঙে হাইওয়েতে যান চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে; যা তিনি অস্বীকার করেছেন।
বিবিসি ফার্সির একটি এক্স-রে চিত্র বলছে, এক বন্দির তিনটি পাঁজর ভেঙে গেছে। তাঁর ফুসফুস ভেদ করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল।