হিজড়া সুলতানা যেখানে যাচ্ছেন, লোকজন ঘিরে ধরছেন

0
132
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হিজড়া সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকা। বুধবার নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি গণসংযোগ করেন

সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকার হাতে লিফলেট। রাজশাহী নগরের মুন্সিডাঙ্গা এলাকায় যেতেই তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এক নারী। আরও কয়েকজন এসে ঘিরে ধরে কথা বললেন তাঁর সঙ্গে। ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন নিজেরাই। লিফলেট দিতে চাইলেও নিলেন না। বললেন, লিফলেট লাগবে না। তাঁরা চেনেন সাগরিকাকে।

সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকা ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’–এর সাধারণ সম্পাদক। এবার তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তিনি। প্রতীক ঘোষণার পর থেকে তিনি প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি যে ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচন করছেন, সেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আরও পাঁচ প্রার্থী আছেন। সুলতানার নির্বাচনী প্রতীক আনারস।

গতকাল বুধবার বিকেলে সুলতানা নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন অলিগলিতে হেঁটে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। ওয়ার্ডের মুন্সিডাঙ্গা এলাকায় তিনি যেতেই ছেড়ুন নামের এক নারী তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ওই নারী বলেন, ‘ও ভিন্ন মানুষ। মানুষ ভিন্নতা চায়। ওর জন্য দোয়া।’ সেখানেই আরও কয়েকজন ঘিরে ধরে তাঁকে। সবাই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। তিনিও সব কথার উত্তর দেন। নিজে থেকেই ভোটাররা তাঁকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

ওই এলাকায় একটি মন্দিরের কাছাকাছি যেতেই কয়েক নারী ঘিরে ধরেন সুলতানাকে। পলি সাহা নামের এক নারীকে লিফলেট দেন তিনি। পলির বাড়ি থেকে বিস্কুট, পানি আনা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে বাড়ির ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পলি সাহা বলেন, ‘একজন নতুন মানুষ এসেছেন এবার। এবার নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী তাঁর বাড়ির আঙিনায় আসেননি। এবার তাঁকে সুযোগ দেবেন।’

হিজড়া বলে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর আর বিদ্যালয়ে টিকতে পারেননি সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকা। আগের ক্লাসগুলোও পার করেছেন নানা টিপ্পনীতে। শেষমেশ বাড়িও ছাড়তে হয়। এরপর নানা সংগ্রামে কেটেছে জীবন। সব বাধা পেরিয়ে এখন জনগণের সেবা করতে চান তিনি। সবার কাছে তিনি সাগরিকা নামেই পরিচিত।

২০০০ সালে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামের সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালে মহিলা অধিদপ্তর ও ২০০৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায় সংগঠনটি। তিনি হিজড়াদের ভোটাধিকার, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশীদারত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। ২০২২ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

গণসংযোগ চলাকালে সুলতানার সঙ্গে কথা হয়। সুলতানা বলেন, তিনি আগে থেকেই এই ওয়ার্ডগুলোর মানুষের সঙ্গে পরিচিত। নির্বাচনের মাঠ তিনি নিজের করে নিতে পেরেছেন। ভোটাররা বিকল্প চান, তিনি সেই বিকল্পের প্রতীক। তাঁরা সহজভাবে গ্রহণ করছেন তাঁকে। তবে কিছু মানুষ বাজে কথা বলছেন।

দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা বলেন, সুলতানা তিনটি ওয়ার্ডের সবার প্রার্থী। তাঁর জন্য সবাই কাজ করছেন। তবে কিছু মানুষ বলে বেড়াচ্ছেন, সুলতানা পাস করলে হিজড়াদের অত্যাচার বেড়ে যাবে। এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ মানুষই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.