স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হলেন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী

0
188
গলায় লাল কাপড় জড়ানো এরাদুল (ডানে)

চট্টগ্রাম সদর সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. এরাদুল হক নিজামী (ভুট্টো) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাঁকে সভাপতি ঘোষণা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মো. নাছির উদ্দিনকে।

এরাদুল হককে সভাপতি করায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোক সংগঠনে থাকার পরও কেন একজন সরকারি কর্মীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্ব দিতে হলো। এটা সরকারি চাকরিবিধির যেমন পরিপন্থী, তেমনি দলের গঠনতন্ত্রের সঙ্গেও যায় না।

এরাদুল হক মিরসরাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে সদর সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। চতুর্থ শ্রেণির এই পদে থেকেও তিনি রাজনীতি করে গেছেন। এ ছাড়া তাঁর নানা ব্যবসা–বাণিজ্যও রয়েছে।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে বা অন্য কোনোভাবে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না বা বাংলাদেশে বিদেশের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারেই সহায়তা করতে পারবেন না।’

জানতে চাইলে এরাদুল হক বলেন, ‘আমি ছোটখাটো চাকরি করি। যাঁরা বড় কর্মকর্তা, তাঁদের রাজনীতি করতে বাধা আছে। আমরা কর্মস্থলে ইউনিয়ন (সিবিএ) করি। আর স্থানীয় রাজনীতি করছি। কেন্দ্রে রাজনীতি করতে যাচ্ছি না।’

এরাদুল দাবি করেন, ‘আমি প্রতিদিন অফিস করি। কোনো ফাঁকি দিই না। গত বছর একবার চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার স্যাররা ছাড়তে দেননি। তাঁরা বলেছেন, আমার মতো লোক দরকার আছে। ক্লাস টু থেকে আমার রাজনীতির সঙ্গে পরিচয়। আমাদের ঘরে সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। আমার ভাতিজা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি, ভাগনে ছাত্রলীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, ভাই শিক্ষক সমিতির নেতা।’

জানতে চাইলে সদর সাবরেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চাকরিবিধিতে উল্লেখ আছে সরকারি কোনো কর্মচারী রাজনীতি করতে পারবেন না। এখন এরাদুল যে সরাসরি রাজনীতি করছেন, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। আমার কাছে ব্যাখ্যা চাইলে ব্যাখ্যা দেব।’

চট্টগ্রাম নগরের একটি কনভেনশন সেন্টারে গতকাল এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন। মোশাররফের অনুসারী হিসেবে এরাদুল পরিচিত। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন।

সরকারি কর্মচারী সভাপতি হতে পারেন কি না, জানতে চাইলে গাজী মেজবাউল বলেন, ‘আমি এ ধরনের সমস্যায় তো আগে পড়িনি। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি সরকারি চাকরি করেন কি না। তিনি চাকরিতে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, আমি বিষয়টি আরও যাচাই–বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেব।’

এবারই প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.