সীমান্তে অস্ত্রসহ আটক ২৪, হাতবোমা বিস্ফোরণে আহত ৪

0
61
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হোয়াইক্যং এবং হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এদিকে সীমান্তে উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে আজ উখিয়ার পালংখালী সাতটি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় অস্ত্রসহ ২৪ জনকে আটক করেছেন স্থানীয়রা। অনুপ্রবেশে বাধা দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ছোড়া হাতবোমার আঘাতে আহত হয়েছেন চারজন।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) যে চারজন আহত হয়েছেন তারা হলেন উখিয়া উপজেলার থাইংখালী গ্রামের মোবারক, আয়ুবুল ইসলাম, কালু ও আব্বু।

থাইংখালী পুটিবনিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ২৪ জন যুবক একটি ডিঙি নৌকায় করে বাংলাদেশে প্রবেশের পর স্থানীয়রা তাদের মিয়ানমারের পুলিশ মনে করেন। কিন্তু কাছে এলে দেখা যায় তারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। পরে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দিলে তাদের একজন হাতে থাকা বোমা ছুড়ে মারেন। এতে চার যুবক আহত হন।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, অনুপ্রবেশকারী যাদের আটক করা হয়েছে অস্ত্রসহ তাদের বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হবে। তারপর আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত দিনদিন আরও ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্ত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজারের ডিসি মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানান, মিয়ানমারে সংঘাত বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি, মর্টারশেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারের বসতঘরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নিদের্শনা রয়েছে। এ বিষয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।

বান্দরবান ডিসি শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছেন। উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। লোকজনকে আনতে স্থানীয় চেয়ারম্যান সহযোগিতা করছেন।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নবনিযুক্ত বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী গণমাধ্যমে বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা কোনোভাবেই নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেবো না।

 

তিনি বলেন, আমরা ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সেরকমই। গতকাল প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কথাও বলেছেন, ধৈর্য ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।

 

ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ জানিয়ে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থা মিলে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.