বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সোজা কথা হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে শুধু নয়, ৩৬ দল আমরা একযোগে বলেছি, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। পরিষ্কার কথা। আমরা বলেছি, নির্বাচনকালীন যদি একটা নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, তাহলে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ন্যাড়া বারবার বেলতলায় যায় না। শেয়ালের কাছে বারবার কেউ মুরগি দেয় না। শেখ হাসিনার অধীনে বা তাঁর সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না।’
আজ সোমবার বিকেলে খুলনা বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। নগরের ডাকবাংলো সোনালী ব্যাংক চত্বরে যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। সমাবেশে বিভাগের ১০ জেলা ও খুলনা মহানগরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বিকেল পৌনে চারটায় সমাবেশ শুরু হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্ত বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সংকটকাল। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে; তার পর থেকে এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করবার, তাকে পরাজিত করবার, জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার যত চেষ্টা হয়েছে, তার চেয়েও সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট এখন উপস্থিত। সংকট থেকে উত্তরণের প্রধান চ্যালেঞ্জ শুধু ভোটের অধিকার নয়, আমার বাংলাদেশকে রক্ষার অধিকার। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধই আমরা শুরু করেছি। সমস্ত বাংলাদেশের মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। বেআইনিভাবে ক্ষমতা জবরদখল করে রাখা, সংবিধান লঙ্ঘনকারীদের ক্ষমতা থেকে না সরালে শুধু ভোট নয় বাংলাদেশদেশটাই থাকবে না, অস্তিত্ব থাকবে না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে পেটানোর প্রসঙ্গেও সমাবেশে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজ ঢাকায় একটি নির্বাচন হচ্ছে। ঢাকা-১৭। আওয়ামী লীগের নির্বাচন। কোনো কেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই। সব কেন্দ্র খালি পড়ে আছে। সেখানে আওয়ামী লীগের হেভি ভোল্টেজ প্রার্থী আরাফাত; থিঙ্কট্যাংকের প্রধান নেতা। আরেকজন নিজে নিজে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাই চেনেন। উনি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তাঁকে বাংলাদেশের মানুষ একটু ভিন্নভাবে চেনে জানে; সেই হিরো আলম। উনি একটা কেন্দ্রে গিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিখ্যাত সন্ত্রাসীরা, যারা গণতন্ত্র পাহারা দেয়, আওয়ামী লীগকে পাহারা দেয়। তারা হিরো আলমকে তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তা–ই নয়, তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কী দেউলিয়া হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ, চিন্তা করেন! রাজনৈতিকভাবে এত দেউলিয়া হয়েছে যে একজন হিরো আলমকে পর্যন্ত তাঁরা সহ্য করতে পারে না। এ কথা এ কারণে বলছি, বাংলাদেশে কি করুণ তামাশা চিত্র তারা তৈরি করেছে। গণতন্ত্রকে নিয়ে তামাশা। অথচ তাঁরা চিৎকার করে বলে তাঁদের হাতেই গণতন্ত্র সবচেয়ে নিরাপদ, তারা অতীতে সবচেয়ে ভালো নির্বাচনগুলো করেছে।’
আওয়ামী লীগ তার আগের চরিত্রেই আছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ বাকশাল করেছিল। বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। মানুষের কথা বলার অধিবকার কেড়ে নিয়েছিল। এই আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ। শুধু পোশাকটা পাল্টেছে। খোলনলচেটা পাল্টেছে। তখন পার্লামেন্টের মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল করেছিল। আজকে একটু কায়দা করে নির্বাচন হবে, নির্বাচন হয়, নির্বাচন করছি, পার্লামেন্টে আছে—এ রকম দেখিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালাচ্ছে।’
বিএনপির সহস্র নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভুক্তভোগী নেতা–কর্মী আর স্বজনদের কথা শুনছিলাম আর আবেগে আপ্লুত হচ্ছিলাম। কী জবাব আছে আমাদের। এ কোন রাষ্ট্র তৈরি করলাম আমরা। যে রাষ্ট্রে মানুষের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। কথা বলার অপরাধে হাত কেটে দেওয়া হবে। অভিমত প্রকাশ করলে তাঁকে গুম হয়ে যেতে হবে, তাঁকে হত্যা করা হবে। আমাদের ৬০০ নেতা–কর্মীকে গুম করা হয়েছে, শত-সহস্র নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গুলি করে হাত–পা নষ্ট করে দিয়েছে। এটাই আওয়ামী লীগ। এরপরও তারা বলবে নির্বাচন হবে, নির্বাচন করব। পাঁয়তারা করলেও ওই নির্বাচন হবে না।’
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাচ্চা বাচ্চা শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সব কাতরাচ্ছে, এরই মধ্যে ৭৬ জনের প্রাণ চলে গেছে। আর আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবসরযাপনের জন্য তাঁর পরিবারকে নিয়ে বিদেশে বেড়াতে গেছেন। ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রবল প্রতাপশালী মেয়র তাপস সাহেব তাঁর গোটা পরিবার নিয়ে ইউরোপ সফর করতে গেছেন। অথচ তাঁরা ২৪ ঘণ্টা কথা বলেন। তাঁরা আজকে মানুষকে বিপদে ফেলে বিদেশে গেছেন। এটাই তাঁদের আসল চরিত্র। দেশের মানুষের জন্য জবাবদিহি–দায়বদ্ধতা নেই।’
ব্যবসায়ী নেতাদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত কয়েক বছরে কিছু উচ্ছিষ্টভোগী, তোষামোদকারী তৈরি করেছে। তাঁর মধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা। কয়েক দিন আগে এফবিসিসিআইয়ের একটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আমাদের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ওই সংগঠনের প্রধান বলেছেন, “আবার শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই।” আরেকজন যিনি ইতিমেধ্যে গোটা ঢাকা শহরকে গিলে ফেলেছেন। তিনি বলছেন, শেখ হাসিনা যতটা করেছেন, এত কাজ জীবনে কোনো দিন করেননি। এরা সেসব ব্যবসায়ী, যারা দেশের মানুষের রক্ত চুষে নিয়েছে। আজকে সব গ্যাসের দাম বাড়ে কেন? বিদ্যুতের দাম বাড়ে কেন? কারণ, সব বাড়তি টাকা তাদের পকেটে যায়।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন। বিশেষ বক্তা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বক্তব্য দেন। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ।
গত নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, বারবার চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়ে যাওয়া, ‘গুম’ হয়ে পরে ফিরে আসা, ‘পুলিশের গুলিতে’ নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং হামলা-মামলার শিকার কয়েকজন বিএনপি নেতা–কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেন।