সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাল নোটের কারবার, গ্রেপ্তার ৪

0
201
র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি, ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

জাল নোট তৈরি-বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। সংস্থাটি বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি চক্রের সদস্য। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জালনোটের কারবার চালিয়ে আসছিলেন। তাঁরা এখন পর্যন্ত প্রায় দুটি কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন।

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‍্যাব।

র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—মোহাম্মদ আমিনুল হক ওরফে দুলাল (৪৩), আবদুর রাজ্জাক ওরফে দিদার (৩০), সুজন আলী (৪০) ও মেহাম্মদ সাকিবুল হাসান (২১)। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ ও ডেমরা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি
র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি, ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটির মূল হোতা আমিনুল। অন্যরা তাঁর সহযোগী। আমিনুল একসময় রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি অনলাইনে জালনোট তৈরি করা শেখেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি জাল নোট তৈরি-বিক্রির চক্র গড়ে তোলেন। ‘জাল নোট বিক্রি করি’, ‘জাল টাকা সেল’, ‘জাল টাকা বেচি’—এমন সব নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ-গ্রুপ খুলে তাঁরা জাল নোটের কারবার চালিয়ে আসছিলেন।

জাল নোট তৈরির জব্দ সরঞ্জাম
জাল নোট তৈরির জব্দ সরঞ্জাম, ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমিনুল জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করতেন। তিনি নিজে জালনোটের ডিজাইন করতেন। জালনোট ছাপার কাজ করতেন। তিনি জাল নোট ছেপে তা তাঁর সহযোগী দিদারকে দিতেন। দিদার চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জাল নোট কাটিং ও বান্ডিল করতেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রাহক তৈরি করতেন। তাঁরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন। পরে তাঁদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোট সরবরাহ করতেন। যখন ব্যবসা রমরমা থাকত, তখন চক্রটি দিনে ২ থেকে ৩ লাখের বেশি টাকার জাল নোট তৈরি করত। তাঁরা এক লাখ টাকার জাল নোট ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার দিদার হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি তৈরিপোশাকের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর অল্পসময়ে অধিক লাভের আশায় জাল নোট তৈরি-বিক্রি চক্রে যুক্ত হন তিনি। চক্রের সদস্য সুজন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি এলাকায় জুতোর দোকান করতেন। ব্যবসায় ক্ষতির পাশাপাশি তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে ঢাকায় চলে আসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চক্রের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। জাল নোট ছাপার পর দিদারের সঙ্গে তা কাটিং ও বান্ডিল করতেন তিনি। পরে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করতেন। চক্রের সদস্য সাকিবুল রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতেন। তিনি মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ ও ডেমরা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‍্যাব
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ ও ডেমরা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‍্যাব, ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

র‍্যাব বলছে, চক্রটির সদস্যরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট সরবরাহ করতেন। এ ছাড়া মাছবাজার, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে জাল নোট সরবরাহ করতেন। তাঁরা বিভিন্ন উৎসবের সময় বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপাতেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তাঁরা জালনোট ছাপার পর অব্যবহৃত কাগজসহ অন্যান্য অংশ পুড়িয়ে ফেলতেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.