সাকিবের শোরুম উদ্বোধন, শিশিরের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং আমাদের বিশ্বকাপ

0
192
সাম্প্রতিক ঘটনায় আলোচনায় সাকিব আল হাসান ও উম্মে শিশির, ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এ দেশে বাবা-মায়েরা ছেলের নাম ‘জাফর’ রাখেন। এ দেশে বাবা-মায়েরা বংশ পদবির বাইরেও ছেলের নাম ‘মীর’ রাখেন। কিন্তু ‘মীর’ আর ‘জাফর’ কখনো একসঙ্গে রাখেন না। যখন থেকে এ দেশের মানুষ পলাশীর যুদ্ধকে নবার সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণ হিসেবে বুঝতে শুরু করেছে, জেনেশুনে আর কোনো মা–বাবাই সন্তানের নাম ‘মীর জাফর’ সম্ভবত কখনোই রাখেননি।

বিশ্বাসঘাতকতার সমার্থক হয়ে ওঠা বহুল চর্চিত মীর জাফর নামটা ইদানীং বাংলাদেশের ক্রিকেটেও আলোচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নামের অতিপ্রতিক্রিয়াপ্রবণ জগতে শুরুটা করেছিলেন কেউ একজন। এরপর যার গণ-অনুকরণ হয়েছে লাইকে, কপি-পেস্টে, শেয়ারে, ভাবনার বিস্তৃতকরণে। বারবার উচ্চারিত হতে হতে যা রীতিমতো বয়ানের কাছাকাছি। হোক ভুল কিংবা শুদ্ধ। সদা চঞ্চল ফেসবুকের জল স্রোতে এমন কিছু অবশ্য সব সময়ই ভাসতে থাকে।

তবে ক্রিকেট সমর্থকদের একটি অংশের ভাসিয়ে দেওয়া মীর জাফর শব্দটা স্রেফ স্রোতে বয়ে যেতে দিলেন না একজন। নাম তাঁর উম্মে আহমেদ শিশির। এ দেশের ক্রিকেট তাঁকে সাকিব আল হাসানের স্ত্রী হিসেবে চেনে। সাকিবের ঘটনায় শিশিরের সরব হয়ে ওঠার ঘটনাও নতুন নয়। তবে কী প্রেক্ষাপটে এবার কী ঘটেছে, তা বোঝার আগে চলুন, প্রাসঙ্গিক কিন্তু ভিন্ন এক ঘটনায় ঢুঁ মেরে আসা যাক।

ঘটনাটা সপ্তাহ দুয়েক আগের। সিনেমাপাড়ার। ইউটিউব কনটেন্টের স্বত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে এক চলচ্চিত্র প্রযোজক নায়িকা অপু বিশ্বাসের সিনেমাকেন্দ্রিক ব্যস্ততাহীনতাকে খোঁচা দিতে গিয়ে বলে বসেন, ‘ফিতা কাটা নায়িকা’। ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এক যুগের বেশি কাটিয়ে দেওয়া অপুর জন্য কথাটা ছিল শ্লেষাত্মক। স্বাভাবিকভাবেই কথাটা অপুর ভালো লাগেনি। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ‘ওনার কী যোগ্যতা আছে আমাকে নিয়ে কথা বলার’ বলে খেদও ঝাড়েন অপু।

তবে এর সঙ্গে তাঁর ‘ফিতা কাটা নায়িকা’ তকমাটা মহিমান্বিত করার প্রচেষ্টাও ছিল স্পষ্ট। অপুর প্রতিক্রিয়াটা ছিল এ রকম, ‘আমি নাকি ফিতা কাটা নায়িকা! আরে যোগ্যদেরই তো এ ধরনের অনুষ্ঠানে ডাকা হয়। তারকা ভ্যালুর কারণেই আমাদের মতো তারকাদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান করা হয়। দেখেন না, ক্রিকেটের বড় বড় তারকাকেও নতুন প্রতিষ্ঠানে উদ্বোধন, ফিতা কাটতে ডাকা হয়।’

অপু বিশ্বাসের কথাটা মিথ্যা নয়। যাঁদের তারকামূল্য আছে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের নিয়েই মাতামাতি করে। উদ্বোধন, উন্মোচন বা ফিতা কাটায় ‘শোপিস’ হিসেবে উপস্থিতির ডাক পান নায়ক-নায়িকা তো বটেই, আপাত–গ্ল্যামারহীন ক্রিকেটাররা। মেলে ভালো মানের অর্থকড়ি। হিসাবটা এখানে অতি সরল। প্রতিষ্ঠানের দরকার প্রসার, প্রসারে দরকার প্রচার আর প্রচারে দরকার ওজনদার কেউ। হিসাবটা সরল ওই ওজনদার ব্যক্তিটির জন্যও। তিনি পারফরমিং আর্ট জগতের মানুষ। ভালো করেই জানেন, ওজনটা বেশি দিন থাকে না। যতক্ষণ মাঠে বা ঘাটে, ততক্ষণই ঠাটে আর বাটে। ধীরে ধীরে বয়স বাড়বে, চলনশক্তি (পারফরম্যান্স) কমতে থাকবে, একসময় থামতেই হবে। তখন আর কেউ ডাকবে না, পাশ ফিরে চাইবে না। তাই সময় থাকতেই যতটা সম্ভব কামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।

যে কারণে কেউ কেউ ‘সস্তা হয়ে গেল রে’ ‘টাকায় কেনা যায় রে’ বলে ‘গেল গেল’ রব তুললেও ওজনদার তারকা তা গায়ে মাখেন না। আর মাখেন বা বলেই ফিতা কাটা, শোরুম উদ্বোধনকে মহিমান্বিত করে তোলার চেষ্টা। যদিও ভাবনাটা মিথ্যা নয়, ভীষণ রকম সত্যি।

বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান
বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান

কিন্তু সত্যি হলেই কি সবকিছু মিষ্টিমধুর হয়? স্থান-কাল-পাত্রভেদে সত্যের স্বাদটা অনেক সময় তেতোও হয়। এই মুহূর্তে শোরুম উদ্বোধন নিয়ে যে তেতো অনুভূতিটি হচ্ছে সাকিব আল হাসানের পরিবার ও সমর্থকদের।

ক্যালেন্ডারের পাতা আর ঘড়ির কাঁটা বলছে বিশ্বকাপ চলে এসেছে একেবারে পায়ের কাছে। প্রায় সব কটি দলের দর্শক-সমর্থকেরা ঢুকে গেছেন বিশ্বকাপের ‘বাবলে’। কে কেমন করতে পারে, কোন ম্যাচ কেমন হতে পারে—এ নিয়েই সব কৌতূহল, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ। কিন্তু বাংলাদেশের সমর্থকেরা কি মাঠের ক্রিকেটে অতটা মনোযোগী হতে পেরেছেন?তাঁদের আলাপ-আলোচনায়, জল্পনাকল্পনায় কি শুধুই বিশ্বকাপের ম্যাচ আর ১৫ জনের দল? নাকি দল ঘোষণার আগে-পরের দুই দিনে যে অস্বস্তিকর হাওয়া বয়ে গিয়েছিল, সেটাই এখনো ফাটল দিয়ে বারবার ঢুকে পড়ছে?

হালকা চোট বা পূর্বপরিকল্পিত বিশ্রাম, যে কারণেই হোক বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে পৌঁছার পর বাংলাদেশের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি সাকিব। কিন্তু ক্রিকেট সমর্থকদের একটি অংশ এ নিয়ে ট্রলে মেতে ওঠেন ‘সাকিব কোথাও শোরুম উদ্বোধন করতে গেছেন’ বলে। অন্য একটি অংশ তো এখন সাকিব আল হাসান নামটিও নিতে রাজি নন, তাদের চোখে সাকিব এখন ‘শোরুম আল হাসান’। অতিচর্চায় কথাটা এখন বাংলাদেশ দল ছাড়িয়ে ‘আন্তর্জাতিকতায়’ও রূপ নিয়েছে।

সোমবার ভারতের বিশ্বকাপ দল আসামের গুয়াহাটি থেকে কেরালার থিরুভানান্তাপুরামে গেছে। ব্যক্তিগত কারণে দলের সঙ্গে না গিয়ে বিরাট কোহলি গেছেন মুম্বাইয়ে। এই খবর পড়েই এক দল সমর্থক মন্তব্য করতে থাকেন, শোরুম উদ্বোধন করতে নাকি? কেউবা আবার নাম বিকৃত করে টিপ্পনী কেটেছেন ‘শোরুম আল কোহলি’ বলেও।

সাকিবের শোরুম উদ্বোধন, বিজ্ঞাপনের শুটিং বা বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ততা নতুন কিছু নয়। এই তো আগস্টের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ দল যখন মিরপুরে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি সারছিল, সাকিব তখন কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি আর শ্রীলঙ্কায় লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলে বাণিজ্যিক ব্যস্ততায় ছোটাছুটি করেছেন। শ্রীলঙ্কায় খেলা শেষ করে কলম্বো থেকে দুবাইয়ে যান সোনার দোকান উদ্বোধন করতে। সেখান থেকে ফেরার পরদিন সকালে বরিশালে। দুপুরের মধ্যে ঢাকায় ফিরে বিকেলে যান বনশ্রীতে একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে। এমনকি বাংলাদেশ দল যখন বিশ্বকাপের জন্য ঢাকা ছাড়বে, তখনো নাকি সাকিব বিমানবন্দরে হাজির হন গাড়িতে একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে করতে!

সাকিব আর তামিম যখন ভালো বন্ধু ছিলেন
সাকিব আর তামিম যখন ভালো বন্ধু ছিলেন

সাকিবের মাঠের বাইরের এসব ব্যস্ততা যে খেলায় খুব প্রভাব ফেলে তা নয়। এই যেমন এশিয়া কাপেই সুপার ফোরের শেষ ম্যাচের আগে তিন দিনের ছুটি পেয়ে ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন তিনি। বিজ্ঞাপনের শুটিং করেছেন, জাতীয় সংসদেও গেছেন। এরপর শ্রীলঙ্কায় ফিরে গিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৮০ রান ও ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারও হাতে তুলেছেন।

সাকিবের ক্যারেক্টারটাই আসলে এমন। সমালোচনা হবে, ছি ছি পড়বে। কিন্তু তিনি কাট শটের মতো করে চট করে একটা চার মেরে স্কোরবোর্ডে হাসি এনে দেবেন। ভুলিয়ে দেবেন ঠিক আগের বলটিতেই কীভাবে পর্যুদস্ত হয়েছিলেন।

তবে সাকিবের সামনে এবারকার চ্যালেঞ্জটা অন্যবারের চেয়ে ভিন্ন। তামিম ইকবাল নেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে। দেশের সফলতম ওপেনারকে না রাখার কারণ নির্বাচকেরা বলেছিলেন ফিটনেসের অভাব। আর তামিম নিজে ফেসবুক লাইভে এসে বলেছেন, ক্রিকেটের সঙ্গে বেশ ভালোভাবে জড়িত একজন (প্রথম আলো নিশ্চিত হয়েছে ওই ব্যক্তি বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান) তাঁকে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তনের প্রস্তাব এমনভাবে দিয়েছিলেন যে আগের অন্যান্য ঘটনা মিলিয়ে যা তাঁর কাছে নোংরামি মনে হয়েছে। একের পর এক ঘটনার কারণে পুরো বিষয়টি ‘উদ্দেশ্যমূলক’ ছিল বলেও মনে করেন তামিম।

তিন মাস আগে তামিম ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর দায়িত্ব পান সাকিব। বিশ্বকাপ দলে জায়গা না হওয়ার পেছনে তামিম সাকিবকে দোষারোপ করেননি। কিন্তু একই দিন টি-স্পোর্টসে প্রচারিত সাকিবের সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, তিনি তামিমের অভিযোগেরই পরোক্ষ জবাব দিচ্ছেন। শুরুতে ‘আমি কিছু জানি না’ বললেও পরে যোগ করেন ‘ব্যাটিং অর্ডার বদলে প্রস্তাব দিলেও খারাপ কী দিয়েছে’। ওখানেই থামেননি, সাক্ষাৎকারজুড়ে ‘চিল’ মুডে থাকা সাকিব তামিমের টিম ম্যানশিপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তামিমের নিজের ব্যাটিং অর্ডারে স্থির থাকার সিদ্ধান্তকে ‘আমার ব্যাট আমি খেলব ধরনের ছেলেমানুষি’র সঙ্গে তুলনাও টানেন।

সাকিবের আধা স্পষ্ট, আধা অস্পষ্ট ওই সব কথায় তামিম-সমর্থক তো বটেই, সাকিবের নিজের সমর্থকদেরও বিশ্বাস জন্মায় যে তামিমের বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়ার পেছনে তাঁর ‘হাত’ রয়েছে।

ব্যস, এখান থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেয়ালে জোরেশোরে লেখা হতে শুরু করে—সাকিবের কারণেই নেই তামিম। পরিকল্পনা করেই তামিমকে বিশ্বকাপের বাইরে রাখা হয়েছে। এক কাঠি সরেস হয়ে অনেকে বলে ফেলেন সাকিবের ষড়যন্ত্রের শিকার তামিম। একসময়ের বন্ধুর সঙ্গে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করে ‘মীর জাফরে’র পরিচয় দিয়েছেন সাকিব।

বিশ্বকাপে অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন
বিশ্বকাপে অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন

কিছু আবেগপ্রবণ সমর্থকের বলা শব্দটি ছিল সাকিবের দলবিষয়ক চিন্তাভাবনার নিয়ত নিয়ে। কিন্তু উম্মে আহমেদ শিশির ব্যাপারটাকে নিয়ে গেছেন মাঠের পারফরমার সাকিবে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন, এমন বোলারদের মধ্যে যাঁরা এবারও খেলছেন, তাঁদের শীর্ষ পাঁচজনের ছবি দিয়ে একটা কার্ড পোস্ট করেছিল আইসিসি। ওই পাঁচজনের মধ্যে মিচেল স্টার্কদের সঙ্গে সাকিবেরও ছবি আছে। আইসিসির এই পোস্টটাকে শিশির ব্যবহার করেছেন ‘ষড়যন্ত্র’ তন্ত্রের জবাব হিসেবে। পোস্টটি শেয়ার করে ক্যাপশনে যা লিখেছেন, তার বাংলা অনেকটা এ রকম, ‘ধুর ছাই, মীর জাফরটা এখানে কীভাবে? নিশ্চয়ই এটা ভুয়া’।

বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে গেছে ২৮ সেপ্টেম্বর। প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অনেকেই মনোযোগ ফেরাতে শুরু করেছিলেন ক্রিকেটে। কিন্তু রোববার শিশিরের এমন মন্তব্যে নিভতে যাওয়া আগুন ছলকে উঠেছে আরও একবার, ‘ও…ঘরে তাহলে এসব আলাপই হয়’।

ঘরে কী আলাপ হয়, অথবা হয় কি না, সেই জল্পনা থামানোর কাজটি এখন সাকিবকেই করতে হবে। শোরুম উদ্বোধন ইস্যু আর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব¡হয়তো ওই সব সমর্থকের মনস্তত্ত্ব থেকে উবে যাবে না। সাকিবের একেকটি খারাপ দিন কিংবা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ২০২৩ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ এলে এ দুটো ঘুরেফিরেই আসবে। কিন্তু আপাতত তো থামাতে হবে। চাপা থাকতে হবে মাঠের বাইরের সব বিতর্ক আর সমালোচনা। বাংলাদেশের সামনে এখন তাদের সবচেয়ে প্রিয় সংস্করণ, একই সঙ্গে ক্রিকেট–বিশ্বেরর সবচেয়ে বড় মঞ্চ। এখানে সবাই দেশকে দেখবে, দেশের পতাকাকে দেখবে। আলাদা করে সাকিব বা অন্য কেউ হয়তো অনুঘটক হয়ে থাকবেন, কিন্তু লাল-সবুজের পতাকাটা উঁচু হলো কি না, হলে কতটা উঁচুতে, সেটিই বিশ্ব ক্রিকেট।
বিশ্বকাপটা আর যা–ই হোক, কোনো ব্যক্তির বা বিষয়ের নয়, বাংলাদেশের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.