সাংবাদিক রব্বানির ওপর হামলাকারীদের একজন বলেন, ‘ওই তরা অন্ধকারে নিয়ে মার’

0
126
মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে ঘিরে ধরে পেটানো হচ্ছে সাংবাদিক গোলাম রব্বানিকে। এরপরই মারতে মারতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্ধকারে।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি মোড়ে গত বুধবার রাত ১০টা ১৭ মিনিটে সাংবাদিক গোলাম রব্বানির ওপর হামলা করে একদল সন্ত্রাসী। মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে মারতে মারতে তাঁকে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যাওয়া হয়, যে এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরে।

মাত্র ৩২ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজে গোলাম রব্বানির ওপর হামলার সূত্রপাতের এ দৃশ্য দেখা গেছে। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফুটেজটি ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে অনেকেই ফেসবুকে ফুটেজটি শেয়ার করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঠিক আগ মুহূর্তে সাত থেকে আটটি মোটরসাইকেল উপজেলার পাটহাটি মোড়ে বিভিন্ন স্থানে আসে। বুধবার রাত ১০টা ১৭ মিনিটে সাংবাদিক গোলাম রব্বানির মোটরসাইকেলটি অতিক্রম করার সময় আগেই অবস্থান নেওয়া হামলাকারীরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। হামলাকারীদের মধ্য থেকে একজন বলছিলেন, ‘ওই তরা অন্ধকারে নিয়ে মার’। এরপর তাকে সিসিটিভির আওতার বাইরে নিয়ে তাঁকে উপর্যুপরি মারধর করে সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানি
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি

পুলিশ জানিয়েছে, ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। সবাইকে ধরার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বুধবার রাত ১০টা ১৭ মিনিট। সাংবাদিক গোলাম রব্বানি মোটরসাইকেলে পাটহাটি মোড় পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ একজন দৌড়ে চলন্ত মোটরসাইকেলটির পেছন দিক থেকে টেনে ধরে এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। গোলাম রব্বানি পড়ে যাওয়ার পরপরই একদল সন্ত্রাসী তাঁকে টেনেহিঁচড়ে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পাঁচ থেকে ছয়জন মারধরে অংশ নিলেও আশপাশে আরও অনেক হামলাকারীকে ফুটেজে দেখা গেছে।

জামালপুরে সন্ত্রাসীদের হামলায় সাংবাদিক নিহত

স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁকে মারতে মারতে সিসিটিভি ক্যামেরার বাইরে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ব্যাপক মারধরের পর অচেতন হয়ে পড়লে হামলাকারীরা নিরাপদে পালিয়ে যায়। আশপাশে স্থানীয় দু-একজনকে দেখা গেলেও ওই সাংবাদিকের সাহায্যে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

গোলাম রব্বানি গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ‘বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’-এর জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে ‘একাত্তর টিভি’র বকশীগঞ্জ উপজেলা সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ উঠেছে, সংবাদ প্রকাশের জেরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম লোকজন দিয়ে তাঁকে হত্যা করিয়েছেন। মাহমুদুল আলম সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়েই সাংবাদিককে পেটানো শুরু করে সন্ত্রাসীরা

গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম তাঁর (গোলাম রব্বানি) ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আগেও নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই তাঁকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইতিমধ্যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে মাঠে আছে পুলিশ। ঘটনার পরপরই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তবে যেখানেই থাকুক, সবাইকে আটক করা হবে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.