সর্বনিম্ন শতকোটিপতি কর, আদায় হবে আরও ২৫ হাজার কোটি ডলার

0
105
ঠিকভাবে আদায় করা গেলে শত কোটিপতিদের থেকে আরও ২৫ হাজার কোটি ডলার কর আদায় সম্ভব, ছবি রয়টার্স

সারা বিশ্বে কয়েক হাজার শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সবাই ঠিকভাবে সরকারকে কর দেন না। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে বড় ধরনের কর ফাঁকির অভিযোগও। তবে এসব শতকোটিপতিদের ওপর বৈশ্বিকভাবে সর্বনিম্ন কর ধার্য করা হলে বছরে আদায় হতো ২৫০ বিলিয়ন বা ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির ২০২৪ সালের গ্লোবাল ট্যাক্স ইভেশন বা বৈশ্বিক কর ফাঁকিবিষয়ক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসে অবস্থিত ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি মূলত একটি স্বাধীন গবেষণা কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটি কর ব্যবস্থার ওপর উদ্ভাবনী গবেষণা পরিচালনা করে।

ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ হাজার ৭০০ ধনীর কাছে প্রায় ১৩ লাখ কোটি (১৩ ট্রিলিয়ন) ডলারের সম্পদ রয়েছে। তাঁদের ওপর যদি বৈশ্বিকভাবে একটি ন্যূনতম কর আরোপ করা হয়, তাহলে বছরে ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিরিক্ত পাওয়া যাবে। এই অর্থ তাঁদের মোট সম্পদের মাত্র ২ শতাংশের সমান। এ অবস্থায় সরকারগুলোর পক্ষ থেকে শতকোটিপতিদের কর ফাঁকির বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

গ্লোবাল ট্যাক্স ইভেশন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বর্তমানে শতকোটিপতিরা যে পরিমাণে কার্যকর ব্যক্তিগত কর দেন, তা প্রায়ই অন্যান্য করদাতাদের দেওয়া করের তুলনায় অনেক কম। এর কারণ, শতকোটিপতিরা তাঁদের সম্পদকে শেল কোম্পানির আড়ালে অন্যত্র সরিয়ে রাখতে পারেন। ফলে এসব সম্পদ লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে এবং কর ফাঁকি দেওয়া সহজ হয়।

এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। দেশটির শতকোটিপতিরা গড়ে তাঁদের মোট সম্পদের প্রায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ব্যক্তিগত কর হিসেবে প্রদান করেন। অর্থাৎ কর প্রদানের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অন্যদিকে, উচ্চ করের জন্য সুপরিচিত দেশ ফ্রান্সে শতকোটিপতিদের ব্যক্তিগত কর অনেকটা শূন্যের কাছাকাছি। এর মানে হলো ফ্রান্সের কিছু বিলিয়নিয়ার সেই অর্থে কোনো ব্যক্তিগত আয়করই দেন না।

শতকোটিপতিদের কম কর দেওয়ার প্রবণতাকে সমর্থন করা কঠিন বলে মনে করেন ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির পরিচালক গ্যাব্রিয়েল জুকম্যান। তিনি বলেন, তাঁদের (ধনীদের) এই অভ্যাসের (কর ফাঁকি বা কম কর দেওয়া) কারণে করব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা কমাসহ দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন নেতিবাচক পরিণতি হতে পারে।

গ্লোবাল ট্যাক্স ইভেশন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান সম্পদ বৈষম্যের কারণে কিছু দেশে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এসব দেশে প্রবীণ জনসংখ্যার সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারির মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি অর্থায়ন পর্যাপ্ত নয়। এ ক্ষেত্রে ধনী নাগরিকদের থেকে আরও বেশি পরিমাণে কর আদায়ের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২০২৪ সালের বাজেটে প্রাথমিকভাবে শীর্ষ শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ধনী ব্যক্তিদের ওপর ২৫ শতাংশ ন্যূনতম কর প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেশটির আইনপ্রণেতাদের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে সেই উদ্যোগ স্থগিত হয়ে যায়।

বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কর কম দিতে প্রায়ই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। যেমন যেসব দেশে কম কর হার রয়েছে, সেখানে তাদের মুনাফা স্থানান্তর করে। বহুজাতিক কোম্পানির এ ধরনের কাজ বন্ধে ২০২১ সালে ১৪০টি দেশ একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুসারে বিশ্বব্যাপী সর্বনিম্ন করপোরেট কর হার ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এর মানে হলো এই ১৪০ দেশের যেখানেই যাক না কেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তার মুনাফার ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি বলছে, শতকোটিপতিদের ব্যক্তিগত করের ক্ষেত্রেও এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.