শিবপুরে গুলিবিদ্ধ উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের অবস্থা সংকটাপন্ন

0
131
শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান, ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান (৭০) গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়া হারুনুর রশিদ খানকে গত শুক্রবার রাতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

হারুনুর রশিদ খান শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কের বাড়িতে তাঁকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর পিঠ (মেরুদণ্ডসংলগ্ন) থেকে দুটি গুলি বের করা হয়। এর পর থেকেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনি।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানিয়েছেন, হারুনুর রশিদ খানের পিঠে বিদ্ধ হওয়া দুটি গুলি বের করে আনা হলেও তাঁর শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাবে প্রস্রাবে সংক্রমণসহ হৃৎপিণ্ড ও কিডনিতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য ৭ মে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

হারুনুর রশিদ খানের সঙ্গে থাকা তাঁর ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান বলেন, এখন পর্যন্ত চাচার অবস্থার কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লাইফ সাপোর্টের শেষ স্টেজে আছেন তিনি। আরও দুই দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পর চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত জানাবেন। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ দিন চিকিৎসাধীন থেকে শিবপুরের ইটাখোলা মোড়ে এক জনসভায় যোগ দেন হারুনুর রশিদ খান। মেরুদণ্ডের সমস্যায় নড়াচড়া করতে পারছিলেন না তিনি। এ কারণে গত ১৩ এপ্রিল ভারতের দিল্লির একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে ৩ মে দেশে ফেরেন হারুনুর রশিদ খান। ৬ মে রাতে অচেতন অবস্থায় তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে হারুনুর রশিদ খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তাঁর ছেলে আমিনুর রশিদ খান বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে শিবপুর থানায় মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন শিবপুরের পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), ইরান মোল্লা (৩০) ও হুমায়ুন (৩২), পূর্ব সৈয়দনগরের মো. মহসিন মিয়া (৪২), মুনসেফেরচরের মো. শাকিল (৩৫) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগরের গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)। তাঁদের মধ্যে শাকিল, নূর মোহাম্মদসহ মোট ১১ জন কারাগারে আছেন।

মামলার এজাহার বলা হয়েছে, আসামিরা হারুনুর রশিদ খানের মুঠোফোনে কল করে এলাকার একটি মসজিদের জন্য অনুদান চাইতে আসেন। মহসিন মিয়া, ইরান মোল্লা ও শাকিল নামের তিনজন ঘটনার দিন সকাল সোয়া ছয়টার দিকে পাঁচতলা বাড়িটির তৃতীয় তলায় গিয়ে কল বেল চাপলে হারুনুর রশিদ খান নিজেই দরজা খুলে দেন। তাঁদের বসতে বলে আপ্যায়নের জন্য পেয়ারা নিয়ে আসেন তিনি। ঠিক তখনই ওই তিনজন পিস্তল বের করে দুটি গুলি করেন। এতে পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে হারুনুর রশিদ মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে নেমে মোটরসাইকেলে করে থানাসংলগ্ন সড়ক ধরে পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার বলেন, হারুনুর রশিদ খানকে হত্যাচেষ্টার মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত দুজনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান আসামি আরিফ সরকারসহ বাকি আসামিরা পলাতক আছেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় তাঁদের গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.