শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আলোচনা ‘ফলপ্রসূ হয়নি’ জানিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওসার আহমেদ আজ বুধবার সন্ধ্যার পর এই সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলে মনে করেন শিক্ষকেরা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
এই শিক্ষকনেতা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুটি কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু সেসব কমিটিতে শিক্ষকদের রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো সুবাতাস সেই। বরং তাঁরা মনে করেন, আকস্মিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল তাঁদের আন্দোলন নস্যাতের একটি কৌশল হতে পারে।
এর আগে আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, এ বিষয়ে (জাতীয়করণ) আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে জাতীয়করণের যৌক্তিকতা আছে কি নেই, সেটাসহ শিক্ষা, শিক্ষকদের সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গবেষণাভিত্তিক এই দুই কমিটির প্রতিবেদনের পর এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে করণীয় ঠিক করা হবে।
আগামী আগস্টের শেষ নাগাদ এই দুটি কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, একটি কমিটি জাতীয়করণসহ শিক্ষা ও শিক্ষকদের মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা, যৌক্তিকতা ও করণীয় বিষয়ে গবেষণা করবে। আরেকটি কমিটি আর্থিক বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।
দীপু মনি বলেন, ‘আমরা চাই শিক্ষকেরা যাঁরা এখন আন্দোলনে আছেন, তাঁরা সবাই আজকেই আন্দোলন বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন এবং যাঁর যাঁর শ্রেণিকক্ষে ফেরত যাবেন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যেন বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত না ঘটে, সে বিষয়ে তাঁরা মনোনিবেশ করবেন। এ বিষয়ে তাঁদের প্রতি অনুরোধ রইল।’
ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ সময়ে এই দাবি (মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ) অবাস্তব। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি শিক্ষকনেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য শোনেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারীকরণ) দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনরত শিক্ষকনেতারা করণীয় ঠিক করতে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন। পরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে গত সোমবার আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। আজ তাঁরা নবম দিনের মতো এই কর্মসূচি পালন করেছেন।
এই কর্মসূচির কারণে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর উত্তর পাশ দিয়ে কখনো কখনো বিক্ষিপ্তভাবে যানবাহন চলছে। কখনো কখনো বন্ধ ছিল। শিক্ষকেরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তার একদিকে হাইকোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা পর্যন্ত এবং অন্যদিকে পল্টন মোড়ের আগে তোপখানা রোডের সামনের সড়কে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নেন।
প্রথমে কিছুসংখ্যক শিক্ষক এ কর্মসূচি শুরু করলেও গত রোববার থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।