দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারিকরণ) দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চলা শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনায় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। আজ সোমবার সাত দিন দিন ধরে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বলছেন, প্রথমে কিছুসংখ্যক শিক্ষক এ কর্মসূচি শুরু করলেও গতকাল থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। সামনে আমরণ অনশনের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওসার আহমেদ
বলেন, পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
আজ দুপুরে প্রেসক্লাবে সামনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ মারমুখী ভূমিকায় অবস্থান নিয়েছে। তখন একদল শিক্ষককে দেখা যায়, প্রেসক্লাসের সামনের বিপরীতের দিকে উত্তর দিকের রাস্তায় সরে যাচ্ছেন। আরেক অংশ তখনো প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের স্লোগানের মধ্যে ছিল পুলিশের হামলা কেন, জবাব চাই ইত্যাদি।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, পুলিশের লাঠির আঘাতে কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। অবশ্য প্রাথমিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে প্রেসক্লাব এলাকায় দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, আসলে সব রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছিলেন শিক্ষকেরা। এ জন্য অন্তত এক পাশের রাস্তা যেন সচল রাখা যায়, সে জন্য তাঁদের সরে যেতে বলা হয়েছিল।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে ১১ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
শেখ কাওসার আহমেদ গতকাল রোববার বলেন, যত দিন পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের ঘোষণা না আসবে, তত দিন পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। হয়তো কর্মসূচিতে ভিন্নতা আসবে। যেমন ১১ জুলাই থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্যালয়ে তালা বন্ধ করে এ কর্মসূচি চলছে। আজ থেকে ক্লাস বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে দাবি পূরণের ঘোষণা না এলে সামনে আমরণ অনশনসহ আরও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বর্তমানে সারা দেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি, বাকিগুলো বেসরকারি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২। মোট শিক্ষক আছেন পৌনে তিন লাখের মতো।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এমপিওভুক্ত। এর মানে হলো এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে বেতনের মূল অংশসহ কিছু ভাতা পান। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।