শাহাদাত–মুশফিকের এখন ওড়ার পালা

0
92
বাংলাদেশ দলে নতুন দুই মুখ শাহাদাত হোসেন (বাঁয়ে) ও মুশফিক হাসান

জেমি সিডন্সের সঙ্গে সেদিন কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। সে আলোচনায় একটা নাম শুনেই বিসিবির অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং কোচ ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে বললেন, ‘দিপু অনেক দূর যাবে।’

দিপু, যাঁর আসল নাম শাহাদাত হোসেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের কাছে ২১ বছর বয়সী তরুণের নামটা অপরিচিত হওয়ার কথা নয়। চট্টগ্রামের এই তরুণ ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন।

সিডন্স কথাটা বলেছেন এক মাসও হয়নি। এর মধ্যেই প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ঢুকে গেছেন শাহাদাত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে ১৪ জুন শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টের জন্য গতকাল ঘোষিত ১৫ সদস্যের দলে ডাক পাওয়া দুই নতুনের একজন তিনি। আরেক নতুন মুখ পেসার মুশফিক হাসানও দৃষ্টি কেড়েছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেই। ২০২২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন তিনি।

গত বছরের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অষ্টম হলেও মুশফিকের আক্রমণাত্মক বোলিং ছিল চোখে পড়ার মতো। লাল বলের ক্রিকেটে ২০ বছর বয়সী এই পেসারের ভয়ংকর রূপটা দেখা যায় গত বছরের জাতীয় লিগে। ডিউক বলে তিনি ছিলেন ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক। নিজের প্রথম মৌসুমেই ৬ ম্যাচে ১০ ইনিংসে বোলিং করে নেন ২৫ উইকেট। রংপুরের শিরোপা জয়ে বড় অবদান ছিল এই ডানহাতি পেসারের। বিসিএলেও ৪ ম্যাচে ৭ ইনিংসে বোলিং করে নেন ১৭ উইকেট।

সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন শাহাদাত
সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন শাহাদাত

শাহাদাতের পারফরম্যান্স অবশ্য কিছুটা ওঠানামার মধ্যেই ছিল। তবে সেটা তাঁর সামর্থ্যকে ভুল প্রমাণ করে না। ২০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে দুই সেঞ্চুরিসহ রান করেছেন ১২৬৫। সর্বশেষ সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের বিপক্ষেও একটা অপরাজিত ৭৪ রানের ইনিংস ছিল এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের। শাহাদাতকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা তাঁর নিখুঁত ব্যাটিং কৌশল নিয়ে, যা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্য আদর্শ মনে করেন অনেকে।

শাহাদাত, মুশফিক—দুই তরুণের ক্রিকেটার হওয়ার পেছনেই আছে কঠিন সংগ্রামের গল্প। শাহাদাত বাবাকে হারিয়েছেন ছোটবেলায়। বড় ভাই আবুল হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের অ্যাম্বুলেন্সচালক। ছোট ভাই শাহাদাতকে ক্রিকেটার বানানোর লড়াইটা করেছেন এই বড় ভাই-ই। অভাব-অনটনের মধ্যেও ক্রিকেটের প্রতি তীব্র ঝোঁক দেখে শাহাদাতকে বিকেএসপিতে ভর্তি করান তিনি। বাকিটা তো রূপকথা! বিকেএসপি থেকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে হয়ে যান যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। এবার তো জাতীয় দলে ডাক পেয়ে সর্বোচ্চ চূড়ায়ই উঠে গেলেন তিনি।

অনুশীলনে মুশফিক হাসান
অনুশীলনে মুশফিক হাসান

দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে মুশফিককেও। বাবা হেলাল খান ও মা মোর্শেদা খাতুন চাকরি করতেন ঢাকার এক পোশাক কারখানায়। মুশফিক বড় হয়েছেন নানির কাছে। বড় হয়েছেন আর স্বপ্ন দেখেছেন ক্রিকেটার হবেন। লালমনিরহাট দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে ভালো খেলে জায়গা করে নেন রংপুরের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে, সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ক্রিকেট খেলে নিজেই যখন আয়রোজগার শুরু করলেন, মুশফিক মা-বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান বাড়িতে। সেই মুশফিকই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের শিকড় থেকে শিখরে এসে পৌঁছেছেন। এবার তাঁর ওড়ার পালা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.