ফ্ল্যাটে কালোটাকার সুযোগ বহাল

0
97
ফ্ল্যাট

নতুন আয়কর আইনটি কয়েকটি সংশোধনসহ গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। সেখানে কিছু এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে।

ফ্ল্যাটে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকল। তবে জমি কেনায় সেই সুযোগ আর নেই। নতুন আয়কর আইনে ফ্ল্যাটে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগটি রাখা হয়েছে। নতুন এ আইন গতকাল রোববার সংসদে পাস হয়েছে। সেখানে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন আয়কর আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ফ্ল্যাট বা ভবন নির্মাণ বা ক্রয়ে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করে ওই করবর্ষে নির্দিষ্ট হারে কর দিলে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে অপরাধমূলক কার্যক্রম কিংবা অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের সুযোগ মিলবে না।

নতুন আয়কর আইনটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আইনটি গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, কালোটাকায় ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে করহার হবে প্রতি বর্গমিটারের হিসাবে। এ কারণে প্রতি বর্গমিটারের জন্য প্রস্তাবিত করহার কিছুটা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। আয়কর আইনে সব মিলিয়ে ২৫টি অধ্যায়, ৩৪৫টি ধারা, ৮টি তফসিল আছে।

কোথায় বিনিয়োগে কত কর

রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় ২০০ বর্গমিটারের (১ বর্গমিটারে ৯ বর্গফুট) কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক ভবন কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিলটি সংসদে উত্থাপনের সময় যে কর প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটিই বহাল রাখা হয়েছে। তবে ফ্ল্যাটের আয়তন ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে সে ক্ষেত্রে দিতে হবে প্রতি বর্গমিটারে ৬ হাজার টাকা কর। যদিও প্রস্তাবে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা করের কথা বলা হয়েছিল।

একইভাবে ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ; চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ, নাছিরাবাদ এলাকায় ফ্ল্যাট ও ভবন কেনার ক্ষেত্রে ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ক্ষেত্রে কর দিতে হবে প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার টাকা। ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। যদিও প্রস্তাবে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা করের সুপারিশ করা হয়েছিল।

উল্লেখিত এলাকাগুলো ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকার অন্যান্য জায়গায় ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও ভবন কেনার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে কর দিতে হবে ৮০০ টাকা। ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে প্রতি বর্গমিটারে দিতে হবে ১ হাজার টাকা ও ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে কর দিতে হবে প্রতি বর্গমিটারে দেড় হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবে যা ছিল, তা–ই রাখা হয়েছে।

নতুন আইন অনুযায়ী, জেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় ফ্ল্যাট ও ভবন কিনতে ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ টাকা, ১২০–২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে ৫০০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে ৮০০ টাকা করের বিধান করা হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে ২০০ বর্গমিটারের বেশি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে কর ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরের এলাকায় ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও ভবনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ২০০ টাকা, ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে দিতে হবে ৫০০ টাকা কর। এ ক্ষেত্রেও প্রস্তাবিত করের পরিমাণে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

ফ্ল্যাট ছাড়াও কর দিয়ে কালোটাকায় বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বিদ্যমান সুযোগটিও অব্যাহত থাকবে।

এদিকে চিকিৎসা, হজসহ যেকোনো তীর্থযাত্রা ছাড়া ব্যক্তিগত ভ্রমণে বিদেশে গেলে সম্পদের বিবরণী দাখিলের যে বাধ্যবাধকতা সংসদে উত্থাপিত আয়কর বিলে রাখা হয়েছিল, আইনটি পাসের সময় তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত থাকলেই কেবল রিটার্ন জমার রসিদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগে নিয়ম ছিল ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার বেশি থাকলেই রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক।

এবার অবশ্য ৪৩টি সরকারি–বেসরকারি সেবা নিতে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ন্যূনতম কর দেওয়ার বিধানটি অর্থবিল পাসের সময় প্রত্যাহার করা হতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.