লাল-সবুজের পতাকায় রাঙিয়ে নানা কর্মসূচিতে শনিবার উদযাপন করা হয়েছে বিজয় দিবস ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫২তম বার্ষিকী। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নানা প্রদর্শনী, কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এসব কর্মসূচিতে সোনার বাংলাদেশ গঠনের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণের। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় দিবসটি উদযাপনের জন্য নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও ধরপাকড়ের ভয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষনেতারা।
চট্টগ্রাম
বন্দর নগরীতে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়েছে বিজয় দিবস। শনিবার ভোরের আলো ফুটতেই মানুষের ঢল নামে নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অস্থায়ী শহীদ মিনারে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। দিনভর নানা আয়োজন ছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা প্রমুখ।
রাজশাহী
বিজয় দিবস উদযাপনে প্রথম প্রহর থেকেই রাজশাহী নগরীর শহীদ মিনারগুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান প্রমুখ। পৃথক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
বরিশাল
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরিশালে উদযাপিত হয়েছে বিজয় দিবস। সকালে সর্বস্তরের মানুষ জেলা প্রশাসক কার্যালয়-সংলগ্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন শোভযাত্রা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর কুচকাওয়াজ ও শারীরিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলীসহ জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটির দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকাল ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়।
খুলনা
উৎসবমুখর আয়োজনে খুলনায় বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর গল্লামারী শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। দুপুরে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা এবং ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট
উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস উদযাপন করেছেন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। ভোর থেকেই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢল নামে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। শহীদ মিনার বেদিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদ। এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এসপি আরআরএফ কমান্ডেন্ট, এসপি এপিবিএন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ ছাড়া সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
রংপুর
যথাযথ মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপন করেছেন রংপুরের মানুষ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিল জনতার ঢল। সূর্যোদয়ের পর নগরীর মডার্ন মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভে বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার, প্রেস ক্লাব, সিটি প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন, জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন, জাতীয় পার্টি ও অঙ্গসংগঠন, জেলা দোকান মালিক সমিতি, মোটর মালিক সমিতি ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পৃথক কর্মসূচি আয়োজন করা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ। এরপর বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়।
ময়মনসিংহ
বিজয় দিবস উদযাপনে দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয় পাটগুদাম এলাকার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে। পরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। সম্মিলিত কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির জন্ম ইতিহাস, বর্তমানে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে। পরে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনায় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বগুড়া
বগুড়ায় ৩১ বার তোপধ্বনিসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জিলা স্কুল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর মুক্তির ফুলবাড়িতে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিজয় দিবস উদযাপনে বিএনপির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন ও দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা করা হলেও গ্রেপ্তারের ভয়ে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন। ধরপাকড় আতঙ্কে অন্যান্য উপজেলাতেও বিজয় দিবস পালন করতে পারেননি বিএনপি নেতারা।
রাঙ্গামাটি
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে রাঙ্গামাটিতে চিংহ্লামং মারী স্টেডিয়ামে। জেলা প্রশাসক জনাব মোশারফ হোসেন খান ও পুলিশ সুপার জনাব মীর আবু তৌহিদ বিপিএম(বার)অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ এর অভিবাদন গ্রহন এবং ডিসপ্লে উপভোগ করেন। স্থানীয় মুক্তি যোদ্ধাদের সম্মাাননা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। রাঙ্গামাটির পুলিশ বিভাগ, আনসার ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা এবং স্কাউট দল এই কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্রেতে অংশ গ্রহন করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।