রুশ খেলোয়াড়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে চাঁদাবাজির ফাঁদে পড়েছিলেন বিল গেটস

0
118
বিল গেটস

যুক্তরাষ্ট্রে নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত জেফ্রে এপস্টেইন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের বিল গেটসকে হুমকি দিয়েছিলেন। রাশিয়ার এক ব্রিজ খেলোয়াড়ের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে এ ধনকুবেরকে ব্ল্যাকমেল (মানসিকভাবে জিম্মি) এবং চাঁদাবাজিরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিল গেটসের এ ঘটনার ব্যাপারে জানে—এমন সূত্রের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে রাশিয়ার ব্রিজ খেলোয়াড় মিলা আন্তোনোভার প্রেমের সম্পর্কের কথা এপস্টেইন জানতে পেরেছিলেন। এরপর তিনি বিল গেটসকে হুমকি দিতে থাকেন। মানসিকভাবে জিম্মি করতে থাকেন। বিল গেটসকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের একটি দাতব্য তহবিলে যোগ দিতে বলেন। তবে সে প্রস্তাবে গেটস রাজি হননি। ওই তহবিল এপস্টেইন নিজের সুনাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গঠন করতে চেয়েছিলেন।

২০১০ সালের দিকে আন্তোনোভার সঙ্গে গেটসের সাক্ষাৎ হয়। তখন আন্তোনোভার বয়স ছিল ২০-এর কোঠায়। তাঁরা দুজন একসঙ্গে ব্রিজ খেলেছিলেন।

বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানতে পেরেছে, আন্তোনোভা অনলাইনে ব্রিজ খেলা শেখানোর একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এর জন্য তহবিল নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। বিল গেটসের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা বরিস নিকোলিক বলেন, আন্তোনোভার ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

২০১৩ সালের নভেম্বরে নিউইয়র্ক সিটির একটি বাড়িতে আন্তোনোভা ও নিকোলিকের সঙ্গে এপস্টেইনের বৈঠক হয়। সেখানে আন্তোনোভা তহবিল সংগ্রহের জন্য তাঁর প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন এবং পাঁচ লাখ ডলার তহবিল চান। তবে শেষ পর্যন্ত এপস্টেইন তাঁর উদ্যোগে কোনো বিনিয়োগ করেননি বলে দাবি করেছেন আন্তোনোভা।
এক বছর পর নিউইয়র্কে থাকার জন্য আন্তোনোভাকে একটি অ্যাপার্টমেন্ট দেন এপস্টেইন।

আন্তোনোভা বলেছেন, নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় এপস্টেইন বা অন্য কারও সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়নি।

আন্তোনোভার বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এপস্টেইন তাঁকে সফটওয়্যার কোডিং স্কুলে যাওয়ার জন্য অর্থ দিয়েছিলেন। তিনি সরাসরি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সে অর্থ পরিশোধ করতেন।

আন্তোনোভা বলেন, বিনিময়ে এপস্টেইন তাঁর কাছ থেকে কিছু নেননি। কেন এমনটা করছেন জানতে চাওয়া হলে এপস্টেইন বলেছিলেন, তিনি ধনী। আর তিনি যতটা সম্ভব মানুষকে সহায়তা করতে চান।
বিল গেটসের কাছ থেকে তহবিল পেতে ব্যর্থ হন এপস্টেইন
আন্তোনোভা যে সময়ে তাঁর উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিলেন, একই সময়ে এপস্টেইন তাঁর নতুন তহবিল গঠনের চেষ্টা করছিলেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যে নথিগুলো পর্যালোচনা করেছে, সেখানে দেখা গেছে, জে পি মরগ্যানের সঙ্গে যৌথভাবে এপস্টেইন তাঁর দাতব্য তহবিল গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ তহবিল গঠনের জন্য ন্যূনতম ১০ কোটি ডলার অনুদান প্রয়োজন ছিল। তিনি ধনকুবেরদের কাছ থেকে এ তহবিল সংগ্রহের চেষ্টায় ছিলেন।
সূত্র বলছে, ২০০৮ সালে যৌন নিপীড়নের উদ্দেশে শিশু পাচারের অভিযোগ ওঠার কারণে যে সুনামহানি হয়েছিল, তা দাতব্য তহবিল সংগ্রহ করে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন এপস্টেইন।

বিল গেটসের কাছ থেকে সহায়তার ভিত্তিতেই তহবিলটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন এপস্টেইন। ২০১১ সালের আগস্টে জে পি মরগ্যানের নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ই-মেইলে এপস্টেইন নিজেকে গেটসের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

দুই মাস পর এপস্টেইন জে পি মরগ্যানের নির্বাহীদের কাছে পাঠানো আরেকটি মেইল পাঠান। নির্বাহীরা তখন ওই প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রস্তুত করছিলেন। কিন্তু এপস্টেইন তখন মেইলে জানান, বিল গেটস এ প্রকল্পের সঙ্গে নেই।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জে পি মরগ্যানের মুখপাত্র বলেন, ‘আজ আমরা যা জানি, তা যদি আগে জানতাম, তাহলে কখনোই তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়ে জড়াতাম না।’

বিল গেটসের এক মুখপাত্র বলেছেন, এপস্টেইন কখনোই বিল গেটসের হয়ে কাজ করেননি। জে পি মরগ্যান এবং অন্যদের ভুল বোঝানো হয়েছে।

আবারও দেওয়া হয় হুমকি

সূত্র বলছে, ২০১৭ সালে আন্তোনোভার সঙ্গে বিল গেটসের সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার পর বিল গেটসকে এপস্টেইন আবারও মেইল করেছিলেন। সফটওয়্যার কোডিং স্কুলে পড়তে আন্তোনোভার জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন, সেগুলো বিল গেটসের কাছ থেকে ফেরত চেয়েছিলেন তিনি। এপস্টেইনের সঙ্গে বিল গেটসের প্রেমের সম্পর্কের কথা ফাঁস করে দেবেন বলে হুমকি দেন।

বিল গেটসের এক মুখপাত্র বলেছেন, এপস্টেইনের সঙ্গে এ ধনকুবেরের কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল না।

দুই বছর পর ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় কৌঁসুলিরা এপস্টেইনের বিরুদ্ধে এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের জন্য পাচারের অভিযোগ দায়ের করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন পাচারের ষড়যন্ত্র করারও অভিযোগ আনা হয়। তবে এপস্টেইন অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন। তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। কয়েক মাস পর নিরাপত্তা হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। বলা হয়ে থাকে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.