রাঙ্গার আওয়ামী লীগে যাওয়ার গুঞ্জন

0
109

রংপুরে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে নিয়ে ফের শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। নগরীর জিলা স্কুল মাঠে আগামী বুধবার আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তব্য দেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগমন উপলক্ষে ব্যানার-ফেস্টুনে  ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক ফেস্টুন ঝুলিয়েছেন রংপুর-১ আসনের এমপি ও সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাও।

জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত রাঙ্গা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ফেস্টুন টানানোয় চলছে নানা গুঞ্জন। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীর মাঝে চলছে বিশ্লেষণ। কেউ কেউ বলছেন, রাঙ্গা ওই মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেবেন। অনেকে বলছেন, তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন।

নগরীর সর্বত্র ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশ রাঙ্গার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে ভরে গেছে। ফেস্টুনের বাঁ পাশে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের ছবি, ডান পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ছবি। নিচের দিকে মসিউর রহমান রাঙ্গার বড় ছবি। ফেস্টুনে রংপুর-১ আসন (গঙ্গাচড়া) এলাকায় অভাবনীয় উন্নয়নের রূপকার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জ্ঞাপনসহ কিছু কথা আছে।

জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা ছিলেন দলের মহাসচিবও। সব পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ায় টানাপোড়েন শুরু হয় দলে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নগরীতে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও রাঙ্গার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা ও যুব সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে গত ১৪ জুলাই। আসিফ রংপুর-১ আসনের সাবেক এমপি। তিনি জানান, রংপুর-১ আসনে এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে গণসংযোগে বের হলে রাঙ্গার অনুসারীরা হামলা চালায়। তবে এ ব্যাপারে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি। দল বহিষ্কার করলেও আমি তো এখানকার এমপি। এখানে আমার জনসমর্থন আছে। আসিফ না জানিয়ে আসায় এলাকার মানুষ হয়তো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তবে কার কত জনপ্রিয়তা, নির্বাচন এলেই প্রমাণ হবে।’

রংপুর সিটি বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বলেন, রাঙ্গা আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন বলে মনে হচ্ছে। অটোরিকশাচালক আব্দুল হান্নান বলেন, রাঙ্গা রংপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন। জাতীয় পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টি অনেক দিয়েছে। তাঁকে দলের মহাসচিবও করা হয়েছিল। কিন্তু দলের দেওয়া সম্মান তিনি রক্ষা করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি রংপুরে স্বাগত জানাতেই পারেন। কিন্তু ফেস্টুনে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ছবি না দিয়ে তিনি দলকে অসম্মানিত করেছেন।

জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দলে তাঁর (রাঙ্গার) কোনো পদ নেই। তবে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্বে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের পুত্রবধূ। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে  ফেস্টুন দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোকে অন্যভাবে নিতে রাজি না।’ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো দায়িত্বশীল নেতাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে গতকাল মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আমাকে তো জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদলীয় চিফ হইপ আছি। ফেস্টুনে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ছবি দেইনি। কারণ পার্টি থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলে থাকলে তাদের ছবিও দিতাম।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সেখান থেকে এক সময় উৎপত্তি মঙ্গা শব্দটি চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে বরণ করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’ আগামী বুধবার রংপুরে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে তিনি যোগ দেবেন এবং বক্তব্যও দিতে পারেন– এমন কথা চারদিকে আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, সব কিছু সময়ই বলে দেবে। তবে বুধবার তিনি রংপুরে আসছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.