রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনায় শীর্ষে সামিট ও কেডিএস

0
223
চট্টগ্রাম বন্দর

সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে বেসরকারি ডিপোর রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার হিসাব বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতি এই হিসাব দিয়েছে। গত বছর এসব ডিপোর মাধ্যমে ৭ লাখ ৪৩ হাজার কনটেইনারে পণ্য রপ্তানি হয়। ২০২১ সালের তুলনায় রপ্তানি কনটেইনার বেড়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ।

কনটেইনার ডিপোর মূল কাজ রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা। কারখানায় তৈরি হওয়া রপ্তানি পণ্য কাভার্ড ভ্যানে এসব ডিপোতে আনা হয়। এরপর ডিপোর ছাউনিতে রেখে বিদেশি ক্রেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কনটেইনারে সাজিয়ে রাখা হয়। আর শুল্কায়ন শেষে এসব কনটেইনার বন্দরে নিয়ে তুলে দেওয়া হয় জাহাজে। বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা মূলত এসব ডিপোর গ্রাহক। এ ছাড়া শিপিং এজেন্টও গ্রাহক হিসেবে এসব ডিপো ব্যবহার করে আসছে।

সেবা দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে মাশুল আদায় করে ডিপোগুলো। মাশুলের হার ও কনটেইনার ব্যবস্থাপনার হিসাবে দেখা গেছে, গত বছর কোম্পানিগুলো রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা করে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।

রপ্তানি ছাড়াও ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানোর পর ডিপোতে নিয়ে খালাস করতে হয়। আবার খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে মাশুল আদায় করে ডিপোগুলো।

একক ডিপো হিসেবে শীর্ষে কেডিএস
বর্তমানে দেশে চালু থাকা ২১টি ডিপোর মধ্যে ২০টিতে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা হয়। এ ২০টি ডিপো ১৬টি শিল্প গ্রুপের। এর মধ্যে কেডিএস লজিস্টিকস ২০২২ সালে ১ লাখ ১৮ হাজার কনটেইনার (২০ ফুট লম্বা হিসেবে) রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত এ ডিপোর আয়তন প্রায় ৩০ একর।

জানতে চাইলে কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক আহসানুল কবির বলেন, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, চার লাখ বর্গফুটের বিশাল চারটি ছাউনি ও গুণগত সেবা দিয়ে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে কেডিএস লজিস্টিকস।

একক ডিপো হিসেবে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (পূর্ব ও পশ্চিম)। এ ছাড়া এমজিএইচ গ্রুপের পোর্টলিংক লজিস্টিকস সেন্টার লিমিটেড তৃতীয়, এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চতুর্থ ও ইনকনট্রেড লিমিটেড পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

কোম্পানি হিসেবে শীর্ষে সামিট
কোম্পানি হিসেবে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনায় শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)। সামিট গ্রুপ ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংস লিমিটেডের যৌথ এ প্রতিষ্ঠানের তিনটি কনটেইনার ডিপোর অবস্থান চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায়। ২০২২ সালে এ তিনটি ডিপোর মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কনটেইনার ব্যবস্থাপনা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এসএপিএলের গ্রাহক। আন্তর্জাতিক মানের কর্মপরিবেশ ও উন্নত সেবার কারণে গ্রাহকেরা এ ডিপো বেছে নিচ্ছেন।

বিএম ডিপো পিছিয়েছে, এগিয়েছে ইস্পাহানি
গত বছর ৪ জুন সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার কারণে বিএম ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে প্রায় সাড়ে চার মাস রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা হয়নি এই ডিপোতে। এ কারণে বিএম ডিপো আগের অবস্থান হারিয়েছে। রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনায় এই ডিপোর অবস্থান তিন ধাপ কমে দশম স্থানে নেমেছে।

তিন বছর আগে চট্টগ্রামের কাট্টলিতে চালু হওয়া ‘ইস্পাহানি-সামিট অ্যালায়েন্স টার্মিনাল’ দুই ধাপ এগিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। ইস্পাহানি গ্রুপ, সামিট ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংস লিমিটেডের যৌথ কোম্পানি এটি।

নতুন বছরে মন্দার শঙ্কা
ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের ব্যবস্থাপনা শুরু হয় ১৯৯৯ সাল থেকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিবন্ধন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার অনুমতি দেয় তখন থেকে। আর ২০০৭ সাল থেকে রপ্তানির পাশাপাশি নির্ধারিত আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরের পরিবর্তে ডিপোতে নিয়ে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১ থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে এসব ডিপোর অবস্থান।

গত বছর সার্বিকভাবে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনায় প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২৩ সাল নিয়ে শঙ্কায় আছেন উদ্যোক্তারা। রপ্তানি আয় বাড়লেও পরিমাণের হিসাবে কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আবার আমদানিও কমছে।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির সভাপতি নুরুল কাইয়ূম খান বলেন, ‘ডিপোর ব্যবসায় মন্দা চলছে। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে এই মন্দা অবস্থা কেটে যাবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.