আজ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে এখনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির রাজধানীতে বসবাসরত তিন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হলো। এই শহরে আগে কমপক্ষে ৩০০ বাংলাদেশি থাকতেন। এখন আছেন খুব বেশি হলে ২৫ জন। তাঁরা এই যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে একপ্রকার মানিয়ে নিয়েছেন।
যুদ্ধ ইউক্রেনকে পাল্টে দিয়েছে। আসলে পাল্টে দিয়েছে তো বিশ্বকেই। যুদ্ধের ডামাডোলে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়েছে। প্রায় সব দেশেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ইউক্রেনও তার ব্যতিক্রম নয়।
হাসিনুল বলেন, এখন এক লিটার অকটেনের দাম ১ ডলার ২০ সেন্ট (বাংলাদেশি টাকায় ১২৮ টাকা। যুদ্ধের আগে এর দাম ছিল ৮০ সেন্টের মতো। ৫০ থেকে ৬০ সেন্টের এক কেজি চাল কিনতে এখন প্রায় এক ডলার গুনতে হয়। ভোজ্য তেলের দামও লিটারপ্রতি ৩০ সেন্টের মতো বেড়েছে।
কিয়েভে কয়েকটি দোকান আছে হাসিনুলের। সেগুলো ভাড়া দেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর ভাড়া অর্ধেক পান। সরকারের পক্ষ থেকেই বাসা বা দোকানের ভাড়া কম নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান হাসিনুল হক।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভার্চ্যুয়াল ক্লাস শুরু হয়। তবে কিছুদিন পর সশরীরই ক্লাস চলে। এমনটাই চলছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিন আবার ভার্চ্যুয়াল ক্লাস হচ্ছে। রুশ হামলার এক বছর পূর্তিতে আবার হামলা হতে পারে, সেই আশঙ্কাতেই নিরাপত্তার কথা ভেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান কিয়েভের পিচেস্কিরায়ন এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল জব্বার। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে। ইউক্রেনে আছেন ৩৮ বছর ধরে। বাসার কাছেই একটি স্কুলে চাকরি করেন। সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে জব্বার ফিরে যান এক বছর আগের দিনটিতে। তিনি বলেন, ‘দিনটা তো ভুলতে পারি না। হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। আমাকে খুব সকালে স্কুলে আসতে হয়। সেদিনও এসেছিলাম। সাইরেন বেজে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। স্কুলে সবাই বলাবলি করছিল, শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। আমি প্রথমেই পরিচিত যত বাংলাদেশি আছেন, সবার খোঁজ করতে লাগলাম।’
জব্বার বলেন, ‘শুরুতে কিছুটা ভয় পেতাম। এখন আর পাই না। বাড়িতে থাকি আর স্কুলে থাকি, রুশ মিসাইল হামলা হলে ভূগর্ভস্থ নিরাপদ স্থানে চলে যাই। এটা এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।’
যুদ্ধদিনের এমন বাস্তবতায় অভ্যস্ত হয়েছেন হাবিবুর রহমানও। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরে। গতকাল যখন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তিনি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাকাটা করছিলেন। তিনি ভিডিও কল দিয়ে দেখালেন। কানঢাকা টুপি আর গায়ে মোটা শীতের কাপড় পরেছিলেন। কারণ, তখন তাপমাত্রা মাইনাস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তীব্র শীতের মধ্যে প্রায় ১৫ দিন আগেও বিদ্যুৎ নিয়মিত থাকত না। কয়েক মাস আগে রুশ হামলায় বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হওয়ায় লোডশেডিং শুরু হয়। তখন দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। এখন প্রায় হয়ই না।
হাবিব জানান, হামলার পর ইউরোপ থেকে অনেক লোক আসেন মেরামত করার জন্য। কিছুদিন কষ্ট হয়েছে। এখন সব স্বাভাবিক।
এই নয়া স্বাভাবিকতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও যুদ্ধের আগের দিনগুলো স্মৃতিকাতর করে তোলে বাংলাদেশিদের। আবদুল জব্বার বলেন, ‘একটা সোনার দেশ ছিল। কেমন যেন হয়ে গেল। তবে এখন আর দেশ ছাড়ার কথা ভাবি না। আবার সেসব দিন ফিরবে, এই আশা আমার আছে।’